সার: কৃষির অমৃত, পরিবেশের আশঙ্কা
সার হলো কৃষির এক অপরিহার্য উপাদান, যা মাটিতে পুষ্টি উপাদান যোগ করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় উৎস থেকেই সার পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক সারের মধ্যে রয়েছে গোবর, কম্পোস্ট, সবুজ সার ইত্যাদি। অন্যদিকে, কৃত্রিম সার রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়, যেমন- ইউরিয়া, ডায়ামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি), মনোঅ্যামোনিয়াম ফসফেট (এমএপি) ইত্যাদি।
কৃত্রিম সারের উদ্ভব:
১৯ শতকের শেষভাগে জার্মান রসায়নবিদ জাস্টাস ফন লিবিগের গবেষণার ফলে কৃত্রিম সারের উৎপাদন শুরু হয়। এরপর বিংশ শতাব্দীর শুরুতে হেবার-বোশ প্রক্রিয়ার আবিষ্কার কৃত্রিম সার উৎপাদনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতাস থেকে নাইট্রোজেন নিয়ে এমোনিয়া উৎপাদন করা হয়, যা অন্যান্য কৃত্রিম সার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
সারের প্রকারভেদ:
সারকে বিভিন্ন ভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়:
- একক পুষ্টি উপাদান সার (যেমন: ইউরিয়া, যা শুধুমাত্র নাইট্রোজেন সরবরাহ করে)
- বহুপুষ্টি উপাদান সার (যেমন: ডিএপি, যা নাইট্রোজেন ও ফসফরাস সরবরাহ করে)
- জৈব সার
- অজৈব সার
সারের প্রভাব:
সারের প্রয়োগ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। কিন্তু অতিরিক্ত সার ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে:
- জল দূষণ: অতিরিক্ত সার বৃষ্টির পানির সাথে মিশে জলাশয়ে গিয়ে পানিকে দূষিত করে।
- মাটির উর্বরতা ক্ষয়:
- গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন: সার উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি পায়।
ব্যবহার ও সতর্কতা:
সার ব্যবহার করার সময় মাটি পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট পরিমাণ সার প্রয়োগ করা উচিত। অতিরিক্ত সার ব্যবহার পরিবেশের ক্ষতি করে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতিও ডেকে আনতে পারে। জৈব সারের ব্যবহার বাড়িয়ে এবং কৃত্রিম সারের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব। সরকারের উচিত কৃষকদের জৈব সারের ব্যবহারে উৎসাহিত করা এবং কৃত্রিম সার ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা।
উল্লেখ্যযোগ্য তথ্য:
- ১৮৩৭ সালে ইংরেজ উদ্যোক্তা জন বেনেট লস প্রথম কৃত্রিম সার উৎপাদন করেন।
- হেবার-বোশ প্রক্রিয়া ২০ শতকের শুরুতে আবিষ্কৃত হয়।
- বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালে প্রতি হেক্টর আবাদী জমিতে সারের ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে।
- ২০২১ সালে বিশ্বে সারের ব্যবহার ছিল ১৯৫ মিলিয়ন টন।