সাবিনা পার্ক: জ্যামাইকার ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ
জ্যামাইকার কিংস্টনে অবস্থিত সাবিনা পার্ক কেবলমাত্র একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম নয়, এটি জ্যামাইকার ক্রিকেট ইতিহাসের এক গৌরবোক্ত অংশ। কিংস্টন ক্রিকেট ক্লাবের নিজস্ব এই স্টেডিয়ামটি টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বিখ্যাত। কিংস্টনের শুষ্কতম এলাকায় অবস্থিত এই মাঠের পিচ ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম দ্রুত ও শক্ত পিচ হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৭°৫৮′৪০.৪৭″ উত্তর ৭৬°৪৬′৫৭.২৪″ পশ্চিম অক্ষাংশে অবস্থিত এই স্থানের ইতিহাস বেশ রোমাঞ্চকর।
মূলত একটি ধনী ব্যবসায়ীর বাড়ি ও আশপাশের জমি নিয়ে গঠিত ‘পেন’ ছিল সাবিনা পার্ক। এর একটি অংশ পরবর্তীতে কিংস্টন ক্রিকেট ক্লাব কিনে নেয়। ‘রোজমাউন্ট’ নামের একটি গ্রেট হাউসও ছিল এই এস্টেটে। নামকরণের বিষয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে; কিছু মতে, এটি ইতালির ‘মাগলিয়ানো সাবিনা’ অঞ্চলের নাম অনুসারে রাখা হয়েছে। তবে আরেকটি মর্মান্তিক কাহিনী এই নামের সাথে জড়িত। এক দাসী, সাবিনা, তার চার মাসের শিশুকে হত্যা করেছিল এবং তার শাস্তি হিসেবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তাকে লিগুয়ানিয়া প্লেইনে দাফন করা হয় এবং ঐ স্থানটিই পরবর্তীতে সাবিনা পার্ক নামে খ্যাতি লাভ করে।
১৮৮০ সালে কিংস্টন ক্রিকেট ক্লাব এই মাঠ ভাড়া নেয় এবং ১৮৯০ সালের ২৭ নভেম্বর ৭৫০ পাউন্ডে কিনে নেয়। ১৯৩০ সালে এটি টেস্ট ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এখানেই ইংল্যান্ডের অ্যান্ডি স্যান্ডহ্যাম প্রথম ট্রিপল সেন্টুরি (৩২৫ রান) হাসিল করেন। স্যার গারফিল্ড সোবারসের ঐতিহাসিক ৩৬৫ নাট আউট, লরেন্স রোর ডেবিউতে ২১৪ এবং ১০০ নাট আউট সহ অনেক স্মরণীয় ক্রিকেট ঘটনা এই মাঠে ঘটেছে। তবে ১৯৯৮ সালে পিচের অনুপযোগিতার কারণে একটি টেস্ট ম্যাচ এখানে বাতিল করা হয়েছিল।
১৯৬২ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্ক উদ্বোধনের আগে, জ্যামাইকার জাতীয় ফুটবল দল এই মাঠে খেলত। উত্তরে ব্লু মাউন্টেইন এবং দক্ষিণে কিংস্টন হারবারের সুন্দর দৃশ্য এই মাঠের শোভা বর্ধন করত, যদিও বর্তমানে উত্তর স্ট্যান্ড এই দৃশ্য আংশিকভাবে ঢেকে দিয়েছে। ২০০৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য মাঠটি পুনর্নির্মাণের পর এর ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে ২০,০০০ হয়েছে। ২০২১ সালে ১৯ জন বিখ্যাত জ্যামাইকান ক্রিকেটারের একটি মার্বেল এই মাঠের বাইরে নির্মিত হয়েছে। ২০১৪ সালে ফ্লাডলাইট স্থাপনের পর রাতের ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।