বাংলাদেশের সরকারের নীতিমালা রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও জনকল্যাণের লক্ষ্যে প্রণীত নিয়ম, কৌশল ও কর্মসূচীর সমন্বয়ে গঠিত। এই নীতিমালা দেশের সংবিধান, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সিদ্ধান্ত, সংসদীয় আলোচনা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ে গঠিত। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর থেকেই রাষ্ট্রীয় নীতির ধারণা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
সংবিধানের ভূমিকা: বাংলাদেশের সংবিধান ৮ থেকে ২৫ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রীয় নীতির মূল আদর্শ বর্ণনা করেছে। এই আদর্শগুলোর মধ্যে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ, স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন, মহিলাদের অংশগ্রহণ, কৃষক ও শ্রমিকদের মুক্তি, পল্লী উন্নয়ন এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সংবিধান রাষ্ট্রের উপর নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব অর্পণ করেছে।
নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া: সরকারের নীতি প্রণয়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া। এতে মন্ত্রিপরিষদ, মন্ত্রণালয়সমূহ, বিভিন্ন কমিটি (যেমন: খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিবীক্ষণ কমিটি, প্রশাসনিক সংস্কার বিষয়ক কমিটি), পরিকল্পনা কমিশন, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ এবং সংসদীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের নীতি অনুমোদন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমলাতন্ত্রও নীতি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বৈদেশিক দাতাগোষ্ঠীর ভূমিকা: বৈদেশিক দাতাগোষ্ঠী (যেমন বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের অর্থ সাহায্যের পাশাপাশি, তারা নীতিমালায় প্রভাব বিস্তার করে।
নীতি বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন: নীতি বাস্তবায়নের পর তা মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়নের মাধ্যমে নীতির সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ণয় করা হয় এবং ভবিষ্যৎ নীতি প্রণয়নের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
সুশাসন ও সরকারের নীতি: সুশাসন সরকারের নীতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সুশাসনের নীতিগুলো (স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন ইত্যাদি) সরকারের নীতির কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রযুক্তির ভূমিকা: প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকে আরও স্বচ্ছ, দক্ষ ও কার্যকর করা সম্ভব। ই-গভর্নেন্স, ই-আইনসভা এবং ভার্চুয়াল বিচার ব্যবস্থা নীতি বাস্তবায়নে সহায়তা করছে।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান: সরকারের নীতি বাস্তবায়নে দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল আইনের শাসন, অদক্ষ প্রশাসন ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, মানবাধিকার রক্ষা এবং শাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী।