সমকামিতা (হোমোসেক্সুয়ালিটি) বা সমপ্রেম বলতে সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি রোমান্টিক আকর্ষণ, যৌন আকর্ষণ অথবা যৌন আচরণকে বোঝায়। যৌন অভিমুখিতা হিসেবে সমকামিতা বলতে বোঝায় সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি আবেগীয়, রোমান্টিক ও/বা যৌন আকর্ষণের একটি স্থায়ী কাঠামোবিন্যাস। এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কোনো সম্প্রদায়কেও সমকামিতা শব্দটি দ্বারা নির্দেশ করা হয়।
উভকামিতা ও বিপরীতকামিতার সাথে সমকামিতা যৌন অভিমুখিতার তিনটি প্রধান ভাগের অন্যতম। বিজ্ঞানীরা সমকামিতার প্রকৃত কারণ জানেন না, কিন্তু ধারণা করেন জিনগত, হরমোনগত এবং পরিবেশগত কারণসমূহের জটিল আন্তঃক্রিয়ার ফলে এটি ঘটে। তারা জীববিদ্যা-নির্ভর তত্ত্বগুলোকে বেশি সমর্থন করে থাকেন, যেমন জিন, মাতৃগর্ভের পরিবেশ, এই দুই প্রভাবের মেলবন্ধন অথবা সামাজিক প্রভাবের মেলবন্ধন। যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণে সন্তানপালন বা শৈশবের অভিজ্ঞতার কোনো ভূমিকা আছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, সমকামিতা মানব যৌনতার একটি সাধারণ ও প্রাকৃতিক প্রকরণ, এবং এটি কোনো নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না। যৌন অভিমুখিতা পরিবর্তনের কর্মসূচীর কার্যকারিতা সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
মহিলা সমকামীদের লেসবিয়ান এবং পুরুষ সমকামীদের গে বলা হয়। নানা কারণে স্বঘোষিত সমকামীর সংখ্যা এবং সমলৈঙ্গিক সম্পর্কে আবদ্ধ মানুষের অনুপাত নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। সমকামভীতি ও বৈষম্যের কারণে অনেক সমকামী প্রকাশ্যে তাদের যৌনতা স্বীকার করে না। অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যেও সমকামী আচরণের নিদর্শন নথিভুক্ত হয়েছে।
অনেক সমকামী স্থায়ী সম্পর্কে আবদ্ধ আছেন। মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে এই সম্পর্কগুলো বিপরীতকামী সম্পর্কের সমান। নথিভুক্ত ইতিহাস জুড়ে সমকামী সম্পর্ক ও কার্যকলাপের প্রশস্তি ও নিন্দা উভয়েরই নিদর্শন মেলে, কেবল প্রকাশের ভঙ্গিমা ও সংস্কৃতিজনিত তারতম্য দেখা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছে, যার অন্তর্গত বিবাহ, দত্তক গ্রহণ ও সন্তানপালন, কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকার, সামরিক সেবা, স্বাস্থ্য সেবায় সমানাধিকার এবং অ্যান্টি-বুলিং আইন।