বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে 'প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন' (পিআর) বা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনী পদ্ধতি। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী পদ্ধতি কী, এবং বর্তমান 'ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট' (এফপিটিপি) পদ্ধতি থেকে এর পার্থক্য কী, সে বিষয়টি এই নিবন্ধে আলোচনা করা হবে।
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি কী?
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনী ব্যবস্থায়, ভোটাররা দলীয় প্রতীকে ভোট দেয়, প্রার্থীকে নয়। প্রতিটি দল যে পরিমাণ ভোট পায়, সেই অনুপাতে তারা সংসদে আসন পায়। একক নির্বাচনী এলাকা থাকে না; সারা দেশ একটি একক নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পদ্ধতিতে, প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার অনুযায়ী সংসদে আসন বণ্টন করা হয়।
এফপিটিপি পদ্ধতি থেকে পার্থক্য:
বর্তমান এফপিটিপি পদ্ধতিতে, একক নির্বাচনী এলাকা থেকে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী বিজয়ী হয়। এ পদ্ধতিতে, একটি দল সামগ্রিকভাবে বেশি ভোট পেলেও, আসন সংখ্যার দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে, ভোটের সামগ্রিক হারের প্রতিফলন সংসদে ঘটে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থান:
এই নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। বিএনপি-সহ কিছু দল বর্তমান এফপিটিপি পদ্ধতির পক্ষে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী, সিপিবি, গণ অধিকার পরিষদ এবং অন্যান্য দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালুর পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে। আওয়ামী লীগের স্পষ্ট অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়।
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা:
সুবিধা: ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়, নির্বাচনী অনিয়ম কমে, কালো টাকার প্রভাব কমে।
অসুবিধা: কোনো একক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে জোট সরকার গঠন করতে পারে, যার ফলে সরকারের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
উপসংহার:
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী পদ্ধতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। এ পদ্ধতি চালু হলে, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এবং সরকারের কার্যকারিতার উপর এর প্রভাব কী হবে তা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন দলের মতামত এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।