১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পাকিস্তান সরকার এই মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে। তাদের উপর অভিযোগ ছিল ভারতের সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র। মামলার নামকরণ হয় ত্রিপুরার আগরতলা শহরের সাথে এর সম্পৃক্ততার কারণে। তবে, এই মামলা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ছিল, এটি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের উপর পাকিস্তান সরকারের অত্যাচার ও ষড়যন্ত্রেরই প্রমাণ।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান অবহেলিত ও উপেক্ষিত ছিল। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা কর্মসূচির মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুলে ধরেন, যা জনসমর্থন পায়। এই দাবিকে দমন করতে এবং শেখ মুজিবকে নিষ্ক্রিয় করতে পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা গঠন করে। মামলায় শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করা হয়। পাকিস্তান সরকার সেনাবাহিনীর কিছু বাঙালি কর্মকর্তা ও সদস্যদের গ্রেফতার করে, তাদের বিরুদ্ধে ভারতের সাথে মিলে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ আনা হয়।
এই মামলায় শেখ মুজিবসহ অনেককে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হয়। তবে জনসমর্থন ও গণআন্দোলনের কারণে পাকিস্তান সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এই ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই মামলা পাকিস্তানি শাসকদের নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের প্রমাণ। এর ফলে বাঙালিদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং স্বাধীনতার আন্দোলন আরও তীব্র হয়। মামলাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি ভয়াবহ কালো অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয়।