শুল্ক: বাংলাদেশের অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শুল্কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুল্ক বলতে বোঝায় সরকার কর্তৃক দ্রব্যের আমদানি, রপ্তানি বা উৎপাদনের উপর আরোপিত কর। এই করের মাধ্যমে সরকার রাজস্ব আহরণ করে, যা দেশের উন্নয়নমূলক কর্মসূচীতে ব্যবহৃত হয়। শুল্কের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে, যেমন বহিঃশুল্ক (আমদানি-রপ্তানি দ্রব্যের উপর), আবগারি শুল্ক (দেশীয় উৎপাদিত দ্রব্যের উপর), এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক)।
আবগারি শুল্কের ইতিহাস:
প্রাচীন ভারতবর্ষে বহিঃশুল্কের প্রচলন ছিল। মুগল আমলেও একই ধরণের কর চুঙ্গি হিসেবে প্রচলিত ছিল। লবণ কর মুসলিম শাসকদের রাজস্বের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল, যদিও সম্রাট আকবর এটি বাতিল করার চেষ্টা করেছিলেন। আফিম করও তখনকার সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস ছিল। বাংলাদেশে বর্তমান আবগারি শুল্ক ব্যবস্থা ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪ সালের আবগারি ও লবণ আইনের অধীনে চালু হয়।
শুল্কের পরিবর্তন ও প্রভাব:
১৯৯১ সালে মূসক চালুর পর আবগারি শুল্কের গুরুত্ব কমে যায়। ১৯৯০-৯১ সালে মোট করের ২৬.৫৩% আবগারি শুল্ক থেকে আহরণ করা হতো, যা ২০২০-২১ সালে কমে ১.০৮% এ নেমে আসে। মদ ও তামাকের উপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০ অনুযায়ী মাদক শুল্ক আরোপ করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে বেশিরভাগ দ্রব্যের উপর আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য নয়। বর্তমানে, শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট সেবার উপর আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়।
শুল্ক প্রশাসন:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক, আবগারি ও মূসক উইং শুল্ক সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে। শুল্ক, আবগারি ও মূসক আপিল ট্রাইব্যুনাল ১৯৯৫ সালে গঠিত হয়, যা শুল্ক সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ করে। এই ট্রাইব্যুনালে কারিগরি ও বিচারিক সদস্য উভয়ই রয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। বাংলাদেশ শুল্ক আবগারী ও মূসক প্রশিক্ষণ একাডেমী শুল্ক সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
উপসংহার:
শুল্ক বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অপরিহার্য অংশ। এর মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ, দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, এবং দেশের অর্থনীতিকে সুস্থ রাখা সম্ভব হয়। শুল্ক ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর অবদান আরও বাড়ানো সম্ভব।