শাহ আবদুল করিম: বাউল সংগীতের অমিত সম্পদ
বাংলাদেশের কিংবদন্তি বাউল সংগীতশিল্পী, সুরকার ও গীতিকার শাহ আবদুল করিম (১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯১৬ - ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯) বাউল সংগীতের এক অনন্য অধ্যায়। তার পাঁচশোরও বেশি গান বাংলা সংগীতের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাকে 'বাউল সম্রাট' হিসেবে সম্মান করা হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ।
সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী শাহ আবদুল করিম খুব ছোটবেলায় বাউল শাহ ইব্রাহিম মাস্তান বক্সের কাছে সঙ্গীতের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। আফতাব-উন-নেসা (সরলা) কে বিয়ে করেন এবং ১৯৫৭ সাল থেকে তিনি তার জন্মগ্রামের কাছে উজানধল গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
শুধু প্রেম-ভালোবাসার গান নয়, শাহ আবদুল করিমের গানে প্রতিফলিত হয়েছে ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহের দর্শন তার গানে প্রভাব ফেলেছে। দারিদ্র্যের মধ্যেও তিনি কৃষিকাজের পাশাপাশি সৃষ্টিশীলতার বন্ধন ছিন্ন করেননি। রশীদ উদ্দীন ও শাহ ইব্রাহিম মাস্তান বক্সের কাছে তিনি বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেন। শরীয়তী, মারফতি, দেহতত্ত্ব, গণসংগীতসহ বাউল গানের বিভিন্ন শাখার চর্চা করেছেন।
শাহ আবদুল করিম প্রায় পাঁচশোর অধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমী তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে। মৃত্যুর আগে তার গানগুলো বহু শিল্পীর কণ্ঠে নতুন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনি জীবদ্দশায় দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করেছেন এবং বিভিন্ন সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। ২০০৬ সালে 'জীবন্ত কিংবদন্তিঃ বাউল শাহ আবদুল করিম' নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়, যার অর্থ তার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। 'শাহ আবদুল করিম সংবর্ধন-গ্রন্থ' এবং 'শাহ আবদুল করিম রচনাসমগ্র' নামে তার জীবনী ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে বই প্রকাশিত হয়েছে। তার ৭টি গানের বই এবং 'শাহ আবদুল করিম স্মারকগ্রন্থ' ও প্রকাশিত হয়েছে। সাইমন জাকারিয়া রচিত
কূলহারা কলঙ্কিনী
তার জীবনী ভিত্তিক উপন্যাস। শাহ আবদুল করিমের গানের জনপ্রিয়তা ও তার জীবনের লড়াই, সংগীত জগতে তার অবদান সম্পর্কে অনেক তথ্য এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। তার গান ও জীবনের কাহিনী আজও প্রজন্মের কাছে প্রেরণা দিয়ে যাবে।