শাহজাহান

মুঘল সম্রাট শাহজাহান: স্থাপত্যের অমর কীর্তি ও রাজনৈতিক উত্থান-পতন

মির্জা শাহাবুদ্দিন মুহাম্মদ খুররাম, যিনি শাহজাহান নামে বিখ্যাত (জন্ম: ৫ জানুয়ারি, ১৫৯২ – মৃত্যু: ২২ জানুয়ারি, ১৬৬৬), ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের একজন শক্তিশালী ও প্রভাবশালী সম্রাট। ১৬২৮ থেকে ১৬৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভারত উপমহাদেশ শাসন করেন। 'শাহজাহান' নামটি ফার্সি শব্দ যার অর্থ 'বিশ্বের রাজা'। তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীর ও রাজপুত রাজকন্যা তাজ বিবি বিলকিস মাকানির পুত্র ছিলেন। সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে তিনি শাহজাদা খুররাম নামে পরিচিত ছিলেন।

শাহজাহানের রাজত্বকাল মুঘল স্থাপত্যের স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত। তাজমহল, লাল কেল্লা, শাহজাহান মসজিদসহ অসংখ্য স্থাপত্যকীর্তি তার রাজত্বকালের স্মারক। তিনি মেওয়ারের রাজপুত এবং দক্ষিণাত্যের লোদিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। ১৬২৭ সালে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর তিনি তার ভ্রাতা শাহরিয়ার মির্জাকে পরাজিত করে আগ্রার কেল্লায় নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করেন।

শাহজাহান দক্ষিণাত্যের সুলতানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন, পর্তুগিজ ও সাফাভিদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। মেবারের বিদ্রোহী রাজা রানা অমর সিংকে পরাজিত করেন ও মুঘলদের অধীনে আনেন। দাদা আকবরের ন্যায় তিনিও সাম্রাজ্য বিস্তারে আগ্রহী ছিলেন।

তার শাসনামলে মুঘল সেনাবাহিনীর সংখ্যা দশ লক্ষে উন্নীত হয়, যা তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বাহিনী ছিল। শাহজাহানাবাদ (পুরানো দিল্লি) শহর নির্মাণের জন্য তাকে 'প্রিন্স অফ বিল্ডার্স' বলা হয়। শাহজাহানের আমলে ভারত বিশ্বের ২৪% জিডিপি উৎপাদন করতো। ১৬৩০ সালে দুর্ভিক্ষের সময় তিনি 'লঙ্গর' প্রতিষ্ঠা করে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে কাজ করেন। তিনি শিল্পকলার একজন পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন।

তবে, তার শেষ জীবন সুখের ছিল না। পুত্র আওরঙ্গজেব তাকে আগ্রা দুর্গে বন্দী করে রাখেন এবং সেখানেই ১৬৬৬ সালে তার মৃত্যু হয়। আওরঙ্গজেব তার অন্যান্য পুত্র ও নাতিদেরও হত্যা করেন। শাহজাহানের অবদান স্থাপত্যশিল্পে অনস্বীকার্য হলেও, তার অপচয়ী ব্যয় মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের দিকে নির্দেশ করে। তিনি সোনা, রুপো ও তামার মুদ্রা প্রচলন করেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • শাহজাহান ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের একজন শক্তিশালী সম্রাট।
  • তার রাজত্বকাল মুঘল স্থাপত্যের স্বর্ণযুগ ছিল।
  • তাজমহল, লাল কেল্লা, শাহজাহানাবাদ তার কিছু বিখ্যাত স্থাপনা।
  • তিনি সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন এবং সাম্রাজ্য বিস্তারে আগ্রহী ছিলেন।
  • তার শেষ জীবন আওরঙ্গজেবের হাতে বন্দী হয়ে কাটে।