লালবাগ: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের এক অপূর্ব সমাহার
লালবাগ, নামটি শুনলেই মনে হয় লাল রঙের ফুলের বাগানের কথা। কিন্তু ঢাকার ঐতিহাসিক লালবাগ শুধু একটি বাগান নয়, বরং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও স্থাপত্যের এক অপূর্ব সমাহার। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই এলাকা মুঘল আমলের স্মৃতি বহন করে চলেছে। লালবাগ থানার আয়তন ২.০৪ বর্গ কিমি এবং ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল ১৮৮৭৯৪।
ঐতিহাসিক লালবাগ দুর্গ:
লালবাগের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনা হলো লালবাগ দুর্গ (১৬৭৮), যা আওরঙ্গাবাদ দুর্গ নামেও পরিচিত। যুবরাজ মুহম্মদ আজমের নির্দেশে এর নির্মাণ কাজ শুরু হলেও, আওরঙ্গজেবের ডাকে তাকে দিল্লীতে ফিরে যেতে হয়। পরবর্তীতে শায়েস্তা খান ঢাকার সুবাহদার হিসেবে দুর্গের নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ রেখে যান। ১৬৮৪ সালে তার কন্যা বিবি পরীর মৃত্যুর পর তিনি দুর্গের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। এই দুর্গে বিবি পরীর সমাধি, লালবাগ শাহী মসজিদ (১৭০৩) এবং অন্যান্য মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে। সাম্প্রতিক খননকার্যের ফলে এখানে আরও অনেক কাঠামোর অস্তিত্ব উন্মোচিত হয়েছে, যা দুর্গের ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান:
লালবাগে লালবাগ শাহী মসজিদ ছাড়াও আরও অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড মসজিদ, আজিমপুর বড় দায়রা শরীফ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ইডেন গার্লস কলেজ, আজিমপুর গার্লস হাইস্কুল, ভিকারুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ক্লাব, জিমনেসিয়াম, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল ইত্যাদি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
অর্থনীতি ও জীবিকা:
লালবাগের অর্থনীতি প্রধানত ব্যবসা, চাকরি, এবং শিল্পের উপর নির্ভরশীল। পোশাক শিল্প, প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি, অ্যালুমিনিয়াম শিল্প, ওয়েল্ডিং কারখানা ইত্যাদি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কৃষির অংশীদারিত্ব অপেক্ষাকৃত কম।
লালবাগের গুরুত্ব:
লালবাগ ঢাকা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর ঐতিহাসিক স্থাপনা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একে ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে স্থাপন করেছে। পর্যটকদের কাছে লালবাগ দুর্গ একটি আকর্ষণীয় স্থান। এই ঐতিহাসিক স্থানটির সুরক্ষা ও সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।