রেজিস্ট্রি অফিস: জমি-জমার দলিল রেজিস্ট্রির কেন্দ্রবিন্দু
বাংলাদেশে জমি-জমার দলিল রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি কেবলমাত্র একটি অফিস নয়, বরং এটি জমির মালিকানা, হস্তান্তর এবং অন্যান্য আইনি দিক নিশ্চিতকরণের কেন্দ্রবিন্দু। এই প্রতিবেদনে আমরা রেজিস্ট্রি অফিস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, দলিল রেজিস্ট্রির প্রক্রিয়া এবং জড়িত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে আলোচনা করব।
দলিল রেজিস্ট্রির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
জমির দলিল রেজিস্ট্রির জন্য, ক্রেতাকে বিক্রেতার কাছ থেকে নিম্নলিখিত কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে:
- প্রয়োজনীয় বায়া দলিল
- খতিয়ান (সি,এস,; এস,এ,; আর,এস, বা বি,এস,; নামজারি বা খারিজ ইত্যাদি)
- ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ
- মৌজা ম্যাপ
- রিটার্ন সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জন্মসনদপত্র
জমি-জমার কাগজপত্র সম্পর্কে যদি আপনার যথেষ্ট ধারণা না থাকে, তাহলে দলিল লেখক বা আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দলিল প্রস্তুতকরণ ও যাচাই:
বিক্রেতার কাছ থেকে সংগৃহীত কাগজপত্র যাচাই করার পর, আমিনের মাধ্যমে জমির অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। দলিল লেখক বা আইনজীবীর সাহায্যে সরকার নির্ধারিত ফরমেট অনুসরণ করে দলিল প্রস্তুত করতে হবে। দলিলের ‘তফশীল’ অংশে মৌজার নাম, জমির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ সঠিকভাবে লেখা আছে কিনা এবং ‘হাত নকশা’ অংশে ম্যাপ অনুসারে সঠিকভাবে হাত অংকন করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে হবে।
দলিল সম্পাদন ও তারিখ:
দলিল সম্পাদনের অর্থ দলিলের দাতা/বিক্রেতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দলিলের পক্ষগণ কর্তৃক দলিলের প্রতি পৃষ্ঠায় আড়াআড়িভাবে নাম-স্বাক্ষর করা অথবা প্রাতিষ্ঠানিক সীল-স্বাক্ষর করা। দলিল সম্পাদনের তারিখ দলিল রেজিস্ট্রির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরণের দলিলের জন্য সম্পাদনের তারিখ উল্লেখ করার নিয়ম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল দাখিল:
দলিল প্রস্তুত হওয়ার পর, মূল দলিল, এল,টি নোটিশ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি এবং রেজিস্ট্রেশন ফি, কর ও শুল্ক পরিশোধের পে-অর্ডার (ফটোকপিসহ) সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট দাখিল করতে হবে। দলিল পরীক্ষা ও সম্পাদনকারীর সম্মতিতে টিপের বহিতে সম্পাদনকারীর বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির টিপ গ্রহণ করা হয়।
রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া ও দলিল ফেরত:
দলিল গ্রহণের পর দলিল দাখিলকারীকে ‘৫২ ধারার রশিদ’ প্রদান করা হয়। দলিল রেজিস্ট্রির পর মূল দলিল ফেরত নেওয়ার সময় এই রশিদ জমা দিতে হবে। রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল গ্রহণ এবং দলিল রেজিস্ট্রি একই বিষয় নয়; রেজিস্ট্রি করতে দুই-তিন বছর সময় লাগতে পারে। রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হলে ‘সূচিবহি’ তৈরি করা হয়, যাতে দলিল সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। দলিল ফেরত না নিলে প্রতি মাসে ৫ টাকা করে জরিমানা ধার্য হয়, তবে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। দাবিহীন দলিল দুই বছর পর ধ্বংস করা হয়।
উল্লেখ্য: প্রদত্ত তথ্যগুলি দলিল রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়ার সাধারণ ধারণা দিতে পারে, তবে আইনগত পরামর্শের জন্য একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করা উচিত। আমরা যদি আরও বিস্তারিত তথ্য পাই, তাহলে এই নিবন্ধটি আপডেট করব।