রুদ্র: বৈদিক দেবতা থেকে আধুনিক ব্যাখ্যা
রুদ্র (সংস্কৃত: रुद्र), ঋগ্বেদীয় এক প্রাচীন দেবতা, যার সাথে ঝড়, বায়ু এবং শিকারের সম্পর্ক জড়িত। 'গর্জনকারী' -এই অর্থটি রুদ্র নামের সাথে স্পষ্টভাবে যুক্ত। ঋগ্বেদে তাঁকে 'পরাক্রমশালী' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে রুদ্র নামের ব্যুৎপত্তি কিছুটা জটিল। কিছু ব্যাখ্যায় 'মন্দ দূরীকারক' এবং 'শান্তির প্রবর্তক', আবার অন্য কিছুতে 'লাল', 'উজ্জ্বল', অথবা 'বন্য ও উগ্র দেবতা' হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
পরবর্তীকালে, রুদ্র নামটি শিব দেবতার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হয়ে পড়ে। শিব সহস্রনামে 'রুদ্র' নামটি পাওয়া যায় এবং শৈব ধর্মে 'শ্রী রুদ্রম' স্তোত্র, রুদ্রকে উৎসর্গীকৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় গান। শৈব আগম অনুসারে রুদ্রের এগারোটি রূপ আছে যাদের একাদশ রুদ্র বলে।
অন্যান্য প্রসঙ্গে, 'রুদ্র' শব্দটি 'একাদশ সংখ্যা' বোঝাতে পারে। 'রুদ্রাক্ষ', যার অর্থ 'রুদ্রের চোখ', এই শব্দটি রুদ্রাক্ষ গাছের ফল ও তার থেকে তৈরি মালার নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার, বিষ্ণু সহস্রনামে বিষ্ণুর একটি নামও রুদ্র।
ঋগ্বেদে রুদ্র সম্পর্কে প্রায় ৭৫টি উল্লেখ আছে। শ্লোকগুলোতে তাঁর তিন চোখ, বিনুনিযুক্ত চুল, সোনার মতো জ্বলজ্বল করার বর্ণনা মিলবে। ভয়ঙ্কর, উগ্র রূপ সত্ত্বেও, রুদ্র রোগ নিরাময়ের ক্ষমতাও ধারণ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। তিনি চিকিৎসকদের চিকিৎসক ও হাজার ওষুধের অধিকারী বলেও বর্ণিত হয়েছেন।
রুদ্রকে 'তীরন্দাজ' (শর্ব) বলা হয় এবং তীর তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন। 'মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র' মোক্ষ লাভের জন্য রুদ্রের আরাধনার উল্লেখ করে। যজুর্বেদে রুদ্রকে মহাবিশ্বের প্রভু ও সকলের অন্তরাত্মা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শিব ও রুদ্রের মিল: অনেক বৈশিষ্ট্য শিব ও রুদ্রের মধ্যে মিল পাওয়া যায়, এবং অনেক সময় এদের একই ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে ঋগ্বেদ বর্ণনা অনুসারে রুদ্রের দুটি স্বভাব থাকে: একটি বন্য ও নিষ্ঠুর, অন্যটি দয়ালু ও শান্ত (শিব)।
শিখ ধর্মেও 'রুদ্র অবতার' নামক রচনায় রুদ্রের বর্ণনা মিলবে। তবে, এই লেখাটি কেবল ধর্মীয় গ্রন্থের উল্লেখ এবং তাদের ব্যাখ্যা উপর নির্ভর করে লেখা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও তথ্য প্রাপ্ত হলে লেখাটি আপডেট করা হবে।