রিজিয়া রহমান (২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৯ - ১৬ আগস্ট ২০১৯) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক ছিলেন। ষাটের দশক থেকে তিনি গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা ও শিশুসাহিত্যে লিখেছেন। ১৯৬৭ সালে তার প্রথম গ্রন্থ ‘অগ্নি স্বাক্ষরা’ প্রকাশিত হয়। ‘ঘর ভাঙা ঘর’, ‘উত্তর পুরুষ’, ‘রক্তের অক্ষর’, ‘বং থেকে বাংলা’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ‘অভিবাসী আমি’ ও ‘নদী নিরবধি’ নামে দুটি আত্মজীবনীও লিখেছেন। উপন্যাসে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরষ্কার লাভ করেন এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
তিনি ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের কলকাতার ভবানীপুরে এক মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল কলকাতার কাশিপুর থানার নওবাদ গ্রামে। তার বাবা আবুল খায়ের মোহম্মদ সিদ্দিক ছিলেন চিকিৎসক এবং মা মরিয়ম বেগম গৃহিণী। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তার পরিবার বাংলাদেশে চলে আসে। তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ফরিদপুরে। ১৯৫০ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন তার লেখা গল্প ‘টারজান’ ‘সত্যযুগ’ পত্রিকায় ছাপা হয়।
বাবার মৃত্যুর পর তারা ঢাকায় চলে আসে। পরে চাঁদপুরে মামার বাড়িতে থাকাকালীন বোরখা পরার কারণে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হয়। প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন। বিয়ের পর স্বামীর সাথে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে থাকাকালীন কোয়েটা গভর্মেন্ট কলেজে দুই বছর লেখাপড়া করেন। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।
রিজিয়া রহমান ‘ত্রিভুজ’ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা বোর্ডের ট্রাস্টি ও জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের কার্য পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তিন বছর বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।
তিনি ১৯৬৭ সালে ‘অগ্নি স্বাক্ষরা’ গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার ‘বং থেকে বাংলা’ উপন্যাস বাঙালি জাতীয়তাবোধ ও বাংলা ভাষার বিবর্তন নিয়ে রচিত। ‘রক্তের অক্ষর’ উপন্যাসে নিষিদ্ধ পল্লীর দেহব্যবসায়ীদের জীবন নিয়ে তিনি লিখেছেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি মোঃ মীজানুর রহমানের স্ত্রী ছিলেন। মীজানুর রহমান ছিলেন খনিজ ভূতত্ত্ববিদ এবং পেট্রোবাংলায় কর্মরত ছিলেন। তাদের এক ছেলে আব্দুর রহমান। রিজিয়া রহমান ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।