রাহাত ফাতেহ আলী খান: কন্ঠশিল্পীর রাজকুমার
পাকিস্তানি সঙ্গীত জগতের এক অমিত্র প্রতিভা রাহাত ফাতেহ আলী খান। ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ফয়সালাবাদে (পূর্বে লায়ালপুর নামে পরিচিত) জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী। কাওয়ালি ও শাস্ত্রীয় সংগীতের ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্মের ফলে ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের স্পর্শে বেড়ে ওঠেন তিনি। তার পিতা ফররুখ ফাতেহ আলী খান এবং চাচা ওস্তাদ নুসরাত ফাতেহ আলী খান-দুজনই ছিলেন বিখ্যাত কাওয়ালি শিল্পী। মাত্র তিন বছর বয়সে নিজের গায়কী দিয়ে পরিবারের সকলকে মুগ্ধ করেন রাহাত।
ওস্তাদ নুসরাত ফাতেহ আলী খানের কাছে তিনি কাওয়ালি সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন। নুসরাতের কাছে শিক্ষা লাভের পর রাহাতের গায়কীতে আসে এক অপূর্ব মাত্রা। ছোটবেলা থেকেই তিনি চাচার সাথে মঞ্চে গান গেয়েছেন এবং কাওয়ালি গানের পাশাপাশি গজল ও অন্যান্য হালকা সঙ্গীতের মাধ্যমেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
বলিউডে প্লেব্যাক সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে রাহাতের অবদান অসাধারণ। তার গাওয়া গান 'তোমার-ই নাম লেখা' বাংলাদেশে বেশ প্রশংসিত হয়। তিনি বহু বলিউড ও পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের জন্য গান গেয়েছেন, যার মধ্যে 'তেরি ওরে' এবং 'মান কি লাগান' উল্লেখযোগ্য। 'জরুরী থা' নামক গানটি ইউটিউবে এক বিলিয়ন ভিউ অর্জন করে রেকর্ড গড়ে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চেও রাহাতের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। ২০০৬ সালে মেল গিবসনের 'অ্যাপোক্যালিপ্টো' চলচ্চিত্রের সব্দাণীতে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার অনুষ্ঠানেও গান গেয়েছেন। রাহাত পাকিস্তানের জনপ্রিয় সঙ্গীত অনুষ্ঠান 'কোক স্টুডিও'-তে ও অংশগ্রহণ করেছেন। 'আফরিন আফরিন' গানটি ইউটিউবে ৩০০ মিলিয়ন ভিউ অর্জন করে ইতিহাস তৈরি করে।
তবে রাহাতের জীবনে কিছু বিতর্কিত ঘটনাও ঘটেছে, যেমন ভারতে বিদেশি মুদ্রা পাচারের অভিযোগ এবং একজন ছাত্রকে মারধরের ঘটনা। তবুও তাঁর গায়কী দিয়ে তিনি মিলিয়ন মানুষের হৃদয় জয় করে নেওয়া অবিচ্ছিন্ন। রাহাত ফাতেহ আলী খান শুধু একজন গায়ক নন, তিনি পাকিস্তানি সংগীতের এক উজ্জ্বল তারা।