রাহাত খান: একজন কথাশিল্পী ও সাংবাদিকের জীবনকাহিনী
রাহাত খান (১৯ ডিসেম্বর ১৯৪০ - ২৮ আগস্ট ২০২০) ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কথাশিল্পী ও সাংবাদিক। ছোটগল্প ও উপন্যাস - উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান অসামান্য। তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন এবং ২০০৯ সালে সহকারী ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা, একুশে পদকে ভূষিত হন। জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ 'মাসুদ রানা' এর রাহাত খান চরিত্রটি তাঁর নামানুসারে সৃষ্টি হয়েছে।
রাহাত খানের জন্ম হয় ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার পূর্ব জাওয়ার গ্রামে। তিনি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীনই তাঁর প্রথম গল্পটি লিখেছিলেন। আনন্দ মোহন কলেজ থেকে অর্থনীতি ও দর্শনে ডিগ্রি এবং ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি নাসিরাবাদ কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেন।
১৯৬৯ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করে পরবর্তীতে দৈনিক ইত্তেফাকে যোগদান করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ইত্তেফাক থেকে অবসর গ্রহণের পর ২০১৩ সালে দৈনিক বর্তমান পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৬ সালে তিনি আড়াই বছরের জন্য বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর বোর্ড চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
রাহাত খানের সাহিত্যকর্মে ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। ১৯৭২ সালে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ 'অনিশ্চিত লোকালয়' প্রকাশিত হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'অমল ধবল চাকরি', 'ছায়াদম্পতি', 'শহর', 'হে শূন্যতা', 'হে অনন্তের পাখি', 'মধ্য মাঠের খেলোয়াড়', 'এক প্রিয়দর্শিনী', 'মন্ত্রিসভার পতন', 'দুই নারী', 'কোলাহল' ইত্যাদি।
২৮ আগস্ট ২০২০ সালে নিউ ইস্কাটনের নিজ বাসায় তিনি মারা যান। তাঁকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।