বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়া, যা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। স্বাধীনতার পর থেকে বহুবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়েছে। প্রথমদিকে সংসদের সদস্যরা গোপন ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করতেন। পরে সংবিধানের সংশোধনীর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের পদ্ধতি চালু হলেও পরবর্তীতে আবার পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ সদস্যদের ভোটে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা থাকতে হয়। সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। কোন ব্যক্তি যদি ৩৫ বছরের কম বয়সী হন বা সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারেন, তাহলে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না।
যখনই রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হয়, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যদিও এমপিরা ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করেন, তবুও তাদের নিজ নিজ দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে যদি বৈধ অভিযোগ আনা হয় এবং সংসদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোটের সমর্থন পায়, তাহলে তাকে অভিশংসন করা যায়।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জাতীয় সংসদের স্পিকারের উপস্থিতিতে শপথ গ্রহণ করেন। শপথের বিষয়বস্তু সংবিধানে উল্লেখ আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১১ টি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ৩টি ছিল প্রত্যক্ষ নির্বাচন।
১৯৭৪ সালে সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ মোহাম্মদউল্লাহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে প্রথম প্রত্যক্ষ নির্বাচনে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, ১৯৮১ সালে বিচারপতি আবদুস সাত্তার এবং ১৯৮৬ সালে লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রত্যক্ষ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৯১ সাল থেকে সংসদীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর থেকে সকল রাষ্ট্রপতি পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ সাহাবুদ্দীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি ২৪ এপ্রিল ২০২৩ সালে পাঁচ বছরের মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।