রাফাহ: গাজা উপত্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও শরনার্থী শিবির
রাফাহ (আরবি: رفح) ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দক্ষিণাংশে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক শহর। গাজা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই শহরটি রাফাহ গভর্নরেটের প্রশাসনিক কেন্দ্র। রাফাহ শুধুমাত্র একটি শহর নয়, এটি বহু ফিলিস্তিনি শরণার্থীর আশ্রয়স্থলও। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকে এখানে বহু শরণার্থী শিবির গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে রাফাহ ক্যাম্প এবং তাল আস সুলতান ক্যাম্প উল্লেখযোগ্য।
ঐতিহাসিক দিক থেকে রাফাহের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৮২ সালে ইসরায়েলের সিনাই উপদ্বীপ ত্যাগের পর রাফাহ দুই ভাগে বিভক্ত হয়: একটি অংশ গাজার অধীনে এবং অপর অংশ মিশরের অধীনে। এই বিভাজন রাফাহের অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। মিশর ও ফিলিস্তিনের মধ্যে রাফাহ সীমান্ত চেকপয়েন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত यাসির আরাফাত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাফাহের কাছে চালু ছিল, কিন্তু ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
জনসংখ্যার দিক থেকে, রাফাহের জনসংখ্যা বহু বছর ধরে ক্রমবর্ধমান। ১৯২২ সালে জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৫৯৯ জন, যা ১৯৪৫ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২২২০ জনে। ১৯৯৭ সালে ফিলিস্তিন কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (PCBS) তথ্য অনুযায়ী, রাফাহ শহরের জনসংখ্যা ছিল ৯১,১৮১ জন, যার মধ্যে ৮০.৩% ছিল শরণার্থী। ২০০৬ সালে PCBS-এর হিসেব অনুযায়ী, জনসংখ্যা ছিল ৭১,০০৩ জন। তবে, ২০১৪ সালে রাফাহের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১,৫২,৯৫০ জন।
রাফাহের ইতিহাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। ১৯৫৬ সালের সুয়েজ যুদ্ধ ও ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ রাফাহের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ১৯৫৬ সালের যুদ্ধে ইসরাইলি বাহিনীর হত্যাকাণ্ডে অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। আরব-ইসরাইল সংঘাতের কারণে রাফাহের জনজীবন বারবার বিপর্যস্ত হয়েছে, এবং শরণার্থী সমস্যা আজও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান। রাফাহের অর্থনৈতিক অবস্থাও তেমন উন্নত নয়, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার বেশ উচ্চ।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাফাহের মানুষ বহু দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গাজা উপত্যকার অবরোধের কারণে রাফাহ বহু সমস্যার সম্মুখীন। রাফাহের ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের সমাধানের উপর নির্ভরশীল।