রাখাইন রাজ্য: মিয়ানমারের একটি ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত এই রাজ্যের উত্তরে চিন রাজ্য, পূর্বে ম্যাগওয়ে, ব্যাগো এবং আয়েইয়ারওয়াদি অঞ্চল, এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর-পশ্চিমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ অবস্থিত। রাখাইন পর্বতমালা একে মূল মিয়ানমার থেকে পৃথক করে। রাখাইন রাজ্যের আয়তন ৩৬,৭৬২ বর্গকিলোমিটার এবং রাজধানী সিত্তুয়ে (সাবেক আকিয়াব)।
ঐতিহাসিকভাবে, রাখাইন রাজ্য স্বাধীন রাজ্য হিসেবে বিদ্যমান ছিল। বিভিন্ন রাজবংশের শাসন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন, এবং বার্মার সাথে একীভূত হওয়ার ইতিহাস রাখাইন রাজ্যের অতীতকে সমৃদ্ধ করেছে। ১৭৮৪ সালে কোনবাং রাজবংশ রাখাইন জয় করে। ১৮২৬ সালে প্রথম অ্যাংলো-বার্মিজ যুদ্ধের পর রাখাইন ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীন হলে রাখাইনও তার অংশ হয়ে ওঠে।
রাখাইন রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে রাখাইন বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে, রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীও বসবাস করে। এই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাত চলে আসছে। ২০১২ সালে এবং ২০১৬-১৭ সালে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রাখাইন রাজ্যে ঘটে। এই সহিংসতার ফলে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
রাখাইন রাজ্যের অর্থনীতি মূলত কৃষি, মৎস্য ও পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অন্যান্য মিয়ানমারের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। সিত্তুয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রাখাইন রাজ্যের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়।
রাখাইন রাজ্যের ঐতিহাসিক স্থাপনা, সুন্দর সমুদ্র সৈকত এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাত পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।