গত ১৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলের বর্বর হামলার মুখে থাকা গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে আশার আলো দেখা দিয়েছে। বিবিসি বাংলাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে পৌঁছানোর আলোচনা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ফিলিস্তিনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তবে মূল কিছু বিষয় এখনও আলোচনার টেবিলে রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল ফিলাডেলফিয়া করিডোরে ইসরাইলি সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত রাখা। মিশর সীমান্তের কাছে অবস্থিত এই করিডোরটি দক্ষিণ গাজার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিবিসি জানিয়েছে, দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনার বিশদ বিবরণ ওই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে গাজা-ইসরাইল সীমান্তে কয়েক কিলোমিটার প্রশস্ত একটি বাফার জোন তৈরির প্রস্তাব। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরাইল ওই এলাকায় সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখবে।
এই বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য হলে কয়েক দিনের মধ্যেই তিন ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। প্রথম ধাপে, প্রতিটি নারী সেনার মুক্তির বিনিময়ে ২০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে। ফিলিস্তিনি বন্দিদের নাম নিয়ে এখনও ঐকমত্য হয়নি। তবে ইসরাইলে ২৫ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড ভোগকারী প্রায় ৪০০ জনের মধ্য থেকে তাদের বাছাই করা হবে। ফাতাহর জ্যেষ্ঠ নেতা মারওয়ান বারঘৌতিও তাদের মধ্যে থাকতে পারেন, যার মুক্তির প্রশ্নে ইসরাইল ভেটো দিতে পারে।
ইসরাইলি জিম্মিদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিছু নিখোঁজ জিম্মির হদিস পেতে হামাসের অনুসন্ধানের প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরাইল ধারণা করছে, ৯৬ জন জিম্মির মধ্যে ৬২ জন এখনও জীবিত আছেন।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা আরও জানান, মিশরীয়/কাতারি তত্ত্বাবধানে গাজার বেসামরিক নাগরিকরা উত্তরে ফিরে যেতে পারবে এবং প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে আসবে। তিন ধাপের পরিকল্পনার চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৪ মাসের যুদ্ধের অবসান ঘটবে, তখন টেকনোক্র্যাটদের একটি কমিটি গাজার তত্ত্বাবধান করবে। ওই কমিটিতে অতীতে যাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ইতিহাস নেই এবং যাদের প্রতি ফিলিস্তিনের সব পক্ষের সমর্থন রয়েছে, তারাই থাকবেন।
যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা পুনরায় শুরু করেছে। উভয় পক্ষ চুক্তিতে বৃহত্তর আগ্রহ দেখিয়েছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি এক দফা আলোচনা চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছিল। তখন স্বল্পমেয়াদী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল হামাস।
হামাস ও ফিলিস্তিনের অন্য দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী বলেছে, ইসরাইল যদি নতুন শর্ত আরোপ করা বন্ধ করে, তাহলে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো সহজ হবে। হামাস শনিবার টেলিগ্রামে জানিয়েছে, চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে শুক্রবার কায়রোতে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) এবং পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে গাজায় যুদ্ধ চলছে।