যুগান্তর: দুটি যুগের সাক্ষী
'যুগান্তর' নামটি বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে দুটি ভিন্ন, কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করে। একটি হল ২০০০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি যমুনা গ্রুপ কর্তৃক প্রকাশিত দৈনিক সংবাদপত্র 'যুগান্তর', এবং অপরটি হল ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন 'যুগান্তর'। উভয়ের নামের সাধারণতা, কিন্তু কাজের ধরণের পার্থক্য চোখে পড়ার মতো।
- *দৈনিক যুগান্তর:** ২০০০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দেশবরেণ্য সাংবাদিক প্রয়াত গোলাম সারওয়ারের সম্পাদনায় যাত্রা শুরু করে 'যুগান্তর'। ব্রডশিট আকারের এ চার রঙা দৈনিক পত্রিকাটি সত্যের সন্ধানে নির্ভীক শ্লোগানকে ধারণ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন খবর, সম্পাদকীয়, বিশ্লেষণ, ফিচার, খেলাধুলা, বিনোদন, টিউটোরিয়াল, চিঠিপত্র ইত্যাদি নিয়মিত প্রকাশ করে। এছাড়াও, পাঠক সংগঠন 'স্বজন সমাবেশ' এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, মাদকবিরোধী আন্দোলন, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, বই উৎসব, শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যুগান্তর সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এই পত্রিকার সাহসী রিপোর্টের ফলে অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মোকাবেলাও করতে হয়েছে।
- *বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর:** ১৯০৬ সালের এপ্রিলে বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ও ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত কলকাতা অনুশীলন সমিতির আন্তর্ভুক্ত হিসেবে সাপ্তাহিক যুগান্তর পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। অরবিন্দ ঘোষের পরামর্শে প্রকাশিত এই পত্রিকার নামানুসারেই সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন 'যুগান্তর' গঠিত হয়। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ও তার সঙ্গীরা অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ ও বোমা তৈরির মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন। ৯৩/এ বাবুবাজার স্ট্রীট ছিল তাদের প্রধান কার্যালয়। হেমচন্দ্র কানুনগো, ক্ষুদিরাম বসু, মানবেন্দ্রনাথ রায় (নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য) সহ অনেকেই এই সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় 'জার্মান প্লট' -এর সাথে যুগান্তরের সম্পৃক্ততা ছিল। ১৯২০ এর দশকে তারা কলকাতা ও আশেপাশের এলাকায় ডাকঘর, ডাকগাড়ি, রেলস্টেশন লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যান। ১৯৩০ সালে কলকাতায় ব্যাপক সন্ত্রাসী পরিকল্পনা করার পর ১৯৩৩ সালে মাস্টারদা সূর্যসেনের ফাঁসির মাধ্যমে যুগান্তরের অন্তিম পর্যায় শুরু হয়।
দুটি 'যুগান্তর' – একটি আধুনিক বাংলাদেশের সাংবাদিকতার প্রতীক, অন্যটি ইতিহাসের এক অসাধারণ অধ্যায়। উভয়ই বাংলার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।