ময়মনসিংহ সদর উপজেলা

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা। ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর ও দক্ষিণ তীরে অবস্থিত ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বর্তমানে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এর আয়তন ও জনসংখ্যা কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে।

ঐতিহাসিক পটভূমি:

১৭৮৭ সালের ১লা মে ময়মনসিংহ সদর থানা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন স্থানে কাচারী বসলেও, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনের কারণে ১৭৯১ সালের সেপ্টেম্বরে সেহড়া মৌজায় নাসিরাবাদ নামে জেলা শহরের পত্তন হয়। ১৮৬৯ সালের ৮ই এপ্রিল এখানে বঙ্গদেশের প্রথম এবং উপমহাদেশের দ্বিতীয় পৌরসভা নাসিরাবাদ মিউনিসিপ্যালিটি গঠিত হয়। মি. আরপর্চা এবং চন্দ্রকান্ত ঘোষ যথাক্রমে পৌরসভার প্রথম অফিসিয়াল ও নন অফিসিয়াল চেয়ারম্যান ছিলেন। ময়মনসিংহ শহর থেকে ১৮১৫ সালে প্রথম মুদ্রিত পুস্তক প্রকাশিত হয় এবং ১৮৫৩ সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহের নামকরণ মমিন শাহ নামক একজন ধর্মীয় শাসনকর্তার নামানুসারে হয়েছে বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৪°৩৮´ থেকে ২৪°৫৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১১´ থেকে ৯০°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এই উপজেলা ব্রহ্মপুত্রসহ অনেক নদ-নদীর তীরে অবস্থিত। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল ৫,৬৬,৩৬৮ জন। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ৬,৭৪,৪৫২ জনে উন্নীত হয়েছে। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে বসবাস করে।

অর্থনীতি ও কৃষি:

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। ধান, গম, শাকসবজি, পাট ইত্যাদি ফসল এখানে উৎপাদিত হয়। এছাড়াও, বিভিন্ন শিল্প কারখানা, বাজার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রয়েছে। বিসিক শিল্প নগরী, জুট মিল, চামড়ার বাজার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

যোগাযোগ ব্যবস্থা:

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে উন্নত। ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক এন৩ এলাকার সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানের সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করে। রেল যোগাযোগের জন্য ময়মনসিংহ জংশন গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষাকালে সীমিতভাবে নৌপথের মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যায়।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:

শিক্ষার দিক থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আনন্দমোহন কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত। স্বাস্থ্যের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক সেবা প্রদান করে।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ধর্মীয় স্থাপনা, পুরাতন ভবন, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও প্রত্নসম্পদে ভরা। জয়নুল আবেদীন, নির্মলেন্দু গুণ, আবদুল হাই মাশরেকী, আবু ফাতেমা মোহাম্মদ আবু ইসহাকসহ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ এই এলাকার সন্তান। আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পরিষদের সদর দপ্তর এখানেই অবস্থিত। ময়মনসিংহ লোকসংগীত ও ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত।

উপসংহার:

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। ঐতিহাসিক গৌরব, সাংস্কৃতিক সম্পদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়নের সমন্বয়ে এটি একটি অনন্য স্থান। এর আরও উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।

মূল তথ্যাবলী:

  • ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ১৭৮৭ সালে থানা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
  • ১৭৯১ সালে সেহড়া মৌজায় নাসিরাবাদ নামে জেলা শহরের পত্তন হয়।
  • ১৮৬৯ সালে বঙ্গদেশের প্রথম পৌরসভা এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত।
  • ময়মনসিংহ লোকসংগীত ও ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।