মো. শামসুর রহমান

আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:১৭ এএম
নামান্তরে:
মো শামসুর রহমান
মো. শামসুর রহমান

শামসুর রাহমান: বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবি

মোঃ শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি জীবদ্দশাতেই বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে, বিশেষ করে পঞ্চাশের দশক থেকে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতায় আবির্ভূত হন এবং দ্রুতই পূর্ব ও পশ্চিম বাংলায় খ্যাতি অর্জন করেন। বুদ্ধদেব বসুর 'কবিতা' পত্রিকায় 'রূপালি স্নান' কবিতা প্রকাশের পর তাঁর প্রতি সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। পরবর্তীতে উভয় বাংলাতেই তাঁর কাব্যশ্রেষ্ঠত্ব ও জনপ্রিয়তা স্থাপিত হয়।

শামসুর রাহমান ছিলেন একজন নাগরিক কবি যাঁর কবিতায় প্রকৃতির ছোঁয়াও ছিল। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে কেন্দ্র করে দুটি অত্যন্ত জনপ্রিয় কবিতা রচনা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি 'মজলুম আদিব' (বিপন্ন লেখক) ছদ্মনামে কলকাতার 'দেশ' ও অন্যান্য পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ করতেন।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন: শামসুর রাহমানের জন্ম পুরনো ঢাকার মাহুতটুলি এলাকায়। তার পিতা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী এবং মাতা আমেনা বেগম। তার ডাকনাম ছিল বাচ্চু। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রামে। ১৯৪৫ সালে পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও তিনি স্নাতক পরীক্ষা দেননি। ১৯৫৩ সালে বিএ (পাস কোর্স) পাশ করেন।

কর্মজীবন: শামসুর রাহমান পেশায় ছিলেন একজন সাংবাদিক। ১৯৫৭ সালে দৈনিক মর্নিং নিউজ-এ সহসম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত রেডিও পাকিস্তান-এ অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন। পরবর্তীতে আবার মর্নিং নিউজ-এ যোগদান করেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সেখানে সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তান-এ সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। ১৯৭৭ সালে দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক শাসনের সময় তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তিনি অধুনা নামের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন।

সাহিত্যকর্ম: তিরিশের দশকের পাঁচ মহান কবির পর তিনিই আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করতে গিয়ে 'সিন্দবাদ', 'চক্ষুষ্মান', 'লিপিকার', 'নেপথ্যে', 'জনান্তিকে', 'মৈনাক' ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।

তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে আছে 'রৌদ্র করোটিতে', 'বিধ্বস্ত নীলিমা', 'বন্দী শিবির থেকে', 'বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে', 'খণ্ডিত গৌরব' ইত্যাদি। তিনি শিশুদের জন্যও বেশ কিছু বই লিখেছেন। 'বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা'র প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন: ১৯৫৫ সালের ৮ই জুলাই তিনি জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁর তিন কন্যা ও দুই পুত্র ছিল।

মৃত্যু: ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ইচ্ছানুসারে ঢাকার বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

সম্মাননা: শামসুর রাহমান বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদক ইত্যাদি। ভারতের যাদবপুর ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে গুগল তার গুগল ডুডল প্রদর্শন করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯২৯ সালে জন্ম, ১৭ আগস্ট ২০০৬ সালে মৃত্যু
  • বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি
  • ‘রূপালি স্নান’ কবিতার জন্য বিখ্যাত
  • মুক্তিযুদ্ধের উপর অসাধারণ কবিতা রচনা
  • সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ কর্মজীবন
  • বহু গুরুত্বপূর্ণ পুরষ্কার ও সম্মাননায় ভূষিত

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - মো শামসুর রহমান

মো. শামসুর রহমান ছাত্রশিবিরের আয়োজিত ‘ইবনে আল হায়াতাম সায়েন্স ফেস্ট’ প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন।