মোড়েলগঞ্জ: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বর্তমান
বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত মোড়েলগঞ্জ উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। এর নামকরণ ইংরেজ শাসনামলে মোরেল পরিবারের নামানুসারে হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এই উপজেলা প্রাকৃতিক দিক থেকে বলেশ্বরী, ঘাসিয়াখালী, পানগুছি, ভোলা ও বলবুনিয়া নদীর উপস্থিতিতে সমৃদ্ধ। ৪৬০.৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী প্রায় ২৯৪,৫৭৬ জন বাসিন্দা বসবাস করে। পুরুষ ও মহিলাদের অনুপাত প্রায় সমান। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান সহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে সহাবস্থান করে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব: মোড়েলগঞ্জের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ইংরেজ শাসনামলে মোরেল পরিবারের কর্তৃক ব্যাপক নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৮৬১ সালের ২৫ নভেম্বর বারৈখালীর কৃষক নেতা রহিমুল্লার নেতৃত্বে কৃষক বিদ্রোহের এক রক্তাক্ত অধ্যায় রচিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ও মোড়েলগঞ্জ বাজারে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের কর্তৃক গণহত্যা সংঘটিত হয়। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন এখনও দেখা যায়। মোড়েলগঞ্জ কুঠিবাড়ি (১৮৪৯), লক্ষ্মীখালি আশ্রম ও বনগ্রামের রাজবাড়ি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতি: মোড়েলগঞ্জের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, আলু, আখ, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আইস ফ্যাক্টরী, করাতকল, রাইসমিল, ওয়েল্ডিং কারখানা, ইটভাটা সহ বিভিন্ন কলকারখানা চালু রয়েছে। সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ কুটিরশিল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি: মোড়েলগঞ্জে শিক্ষার হার ৬০.৭%। ৮টি কলেজ, ৬৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৬৩টি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। সংস্কৃতির দিক থেকে মোড়েলগঞ্জ সমৃদ্ধ। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (৬১৮টি মসজিদ, ৬৫টি মন্দির), প্রেসক্লাব, লাইব্রেরি, থিয়েটার এবং যাত্রাদল সংস্কৃতির চর্চার সুযোগ করে দিচ্ছে।
যোগাযোগ: মোড়েলগঞ্জে পাকা, আধাপাকা এবং কাঁচা রাস্তা উল্লেখযোগ্য। নৌপথ যোগাযোগের ও একটি মাধ্যম। এই উপজেলায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ সীমিত (২৯.১% পরিবারের)। পানীয় জলের উৎস হিসেবে নলকূপ, ট্যাপ এবং অন্যান্য উৎস ব্যবহৃত হয়। স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং বিভিন্ন ক্লিনিক কাজ করে। ব্র্যাক, উদ্দীপন, প্রশিকা, আশা সহ বিভিন্ন এনজিও এই অঞ্চলে কাজ করছে।
মোড়েলগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা যা এর ঐতিহাসিক ঘটনা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সংস্কৃতি জন্য উল্লেখযোগ্য। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।