মোহাম্মদ তোয়াহা: ভাষা আন্দোলনের এক অসামান্য নেতা ও সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ
মোহাম্মদ তোয়াহা (২ জানুয়ারি ১৯২২ - ২৯ নভেম্বর ১৯৮৭) ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একজন অক্লান্ত ভাষা আন্দোলনকারী, সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ এবং মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। তার জন্ম ১৯২২ সালের ২ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার (বর্তমান লক্ষ্মীপুর) রামগতি উপজেলার হাজিরহাট গ্রামে। পিতা হাজী মোহাম্মদ ইয়াসিন এবং মাতা হাসনা বানু। তিনি ফরাশগঞ্জ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক এবং ১৯৫০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবনে তিনি বামপন্থী রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম বামপন্থী ছাত্র সংগঠন। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছাত্র নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি অধিকাংশ পোস্টার, লিফলেট, প্রচারপত্র প্রস্তুত করেছিলেন এবং সরকারের সাথে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এবং নির্যাতিত হন।
তোয়াহা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। আন্দোলনের সময় তিনি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছে ভাষার দাবী নিয়ে স্মারকলিপি তুলে ধরেন। আরবি লিপিতে বাংলা লেখার প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান মজদুর ফেডারেশন গঠন করেন। পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। ১৯৫৭ সালে আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সময় আত্মগোপনে ছিলেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে তিনি লক্ষ্মীপুর ও রামগতি অঞ্চলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়, তিনি আত্মগোপনে যান। ১৯৭৬ সালে পরোয়ানা প্রত্যাহারের পর প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালের ২৯ নভেম্বর লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার হাজিরহাট গ্রামে তার মৃত্যু হয়।