মোহাম্মদ ইব্রাহিম

মোহাম্মদ ইব্রাহিম: একজন অসাধারণ চিকিৎসক, শিক্ষক, সংগঠক ও সমাজকর্মী

ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৯১১-১৯৮৯) বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক ছিলেন, যিনি শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষা, সংগঠন ও সমাজসেবায়ও অসামান্য অবদান রেখেছেন। ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তি ১৯৩৮ সালে এমবি এবং ১৯৪৯ সালে এমআরসিপি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারি মেডিক্যাল সার্ভিসের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

ডাঃ ইব্রাহিমের অবদান সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে। ১৯৫৬ সালে তিনি কয়েকজন সমাজকর্মীর সহযোগিতায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৫৭ সালে সেগুনবাগিচায় বহুমূত্র রোগীদের জন্য একটি আউট-পেশেন্ট ক্লিনিক স্থাপন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকার শাহবাগে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ইন ডায়াবেটিস, এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড মেটাবলিক ডিসঅর্ডার (BIRDEM) প্রতিষ্ঠা করেন, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই ধরণের একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। এই প্রতিষ্ঠানেই সেগুনবাগিচার ক্লিনিকটি স্থানান্তরিত হয় এবং ১৯৮৯ সালে তার মৃত্যুর পর এর নামকরণ করা হয় ইব্রাহিম মেমোরিয়াল ডায়াবেটিস সেন্টার।

ডাঃ ইব্রাহিম শুধুমাত্র ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেই নয়, পুষ্টি, প্রবীণদের সেবা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তিনি Bangladesh Institute of Research and Training for Applied Nutrition (BIRTAN) প্রতিষ্ঠা করেন এবং দরিদ্র বহুমূত্র রোগীদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত তিনি Bangladesh Association of Geriatrics-এর চেয়ারম্যান ছিলেন এবং Institute of Geriatric Medicine and Research প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়নেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

তার স্বাস্থ্য ও সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন, যার মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতা পদক (১৯৭৯)। ১৯৮৯ সালে ঢাকায় তার মৃত্যুর পর, তিনি স্বাস্থ্য ও সমাজসেবায় তার অমূল্য অবদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে রইলেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক, শিক্ষক ও সমাজকর্মী ছিলেন।
  • তিনি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন এবং BIRDEM প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
  • পুষ্টি, প্রবীণ সেবা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
  • তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন, সহ স্বাধীনতা পদক।