মহাকবি আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল (৯ নভেম্বর ১৮৭৭ - ২১ এপ্রিল ১৯৩৮) ছিলেন বিভাগপূর্ব ভারতবর্ষের একজন বিশিষ্ট মুসলিম কবি, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ এবং ব্যারিস্টার। তার উর্দু ও ফার্সি কবিতা আধুনিক যুগের উর্দু ও ফার্সি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান হিসেবে বিবেচিত। তাকে পাকিস্তানের আধ্যাত্মিক জনক হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ইসলামের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়েও তিনি বিখ্যাত ছিলেন। তার "আসরার-ই-খুদী", "রুমুজ-ই-বেখুদী", "পয়গাম-ই-মাশরিক" এবং "জাবুর-ই-আজাম" ফার্সি কাব্যগ্রন্থ এবং "বাং-ই-দারা", "বাল-ই-জিবরাইল" এবং "আরমাঘান-ই-হিজাজ" উর্দু কাব্যগ্রন্থ তাঁকে অমর করে রেখেছে। তিনি ১৯২২ সালে নাইট উপাধি লাভ করেন। তার "শিকওয়া" ও "জবাবে শিকওয়া" কবিতাগুলি দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার প্রভাবশালী রচনা "দ্যা রিকনস্ট্রাকশন অফ রিলিজিয়াস থট ইন ইসলাম" আধুনিক যুগে ইসলামী চিন্তাধারার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। পাকিস্তান সরকার তাকে "জাতীয় কবি" হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তার জন্মদিন পাকিস্তানের সরকারি ছুটির দিন।
আল্লামা ইকবালের জন্ম হয় ১৮৭৭ সালের ৯ই নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোটে। তার পরিবার ছিল জাতিগত কাশ্মীরি, যারা কাশ্মীর থেকে পাঞ্জাবে বসতি স্থাপন করেছিল। তার পিতা শেখ নূর মুহাম্মদ ছিলেন একজন দর্জি, ইসলামের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ। তার মা ইমাম বিবিও ছিলেন ধার্মিক মহিলা। ইকবাল প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন শিয়ালকোটের স্কটিশ মিশন কলেজ থেকে। পরে লাহোরের সরকারি কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার উচ্চ শিক্ষার প্রেক্ষিতে তিনি ইংল্যান্ড ও জার্মানি গমন করেন। ১৯০৫ সালে ইংল্যান্ডে গিয়ে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি নেন এবং ১৯০৬ সালে লিঙ্কনস ইন থেকে ব্যারিস্টার হিসেবে সনদ লাভ করেন।
১৯০৭ সালে জার্মানিতে গিয়ে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ইকবাল তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল করিম বিবি, দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম মুখতার বেগম এবং তৃতীয় স্ত্রীর নাম সরদার বেগম। তিনি লাহোর সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন, এবং একজন প্রথিতযশা আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ১৯০৬ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগে যোগ দেন। তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কাজ মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দিকে নির্দেশ করে। তার রাজনৈতিক ভাবাদর্শ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সহ আরও অনেককে প্রভাবিত করেছিল। তিনি ১৯৩৮ সালে লাহোরে মারা যান। তাঁর সমাধি লাহোরের হুজুরিবাগে।