খন্দকার মোশতাক আহমেদ: একজন বিতর্কিত রাষ্ট্রপতি
খন্দকার মোশতাক আহমেদ (২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ - ৫ মার্চ ১৯৯৬) বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন অত্যন্ত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর তিনি অল্প সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ৮১ দিনের রাষ্ট্রপতি কার্যকাল ব্যাপক বিতর্ক এবং নিন্দার মধ্য দিয়ে কেটেছে।
প্রাথমিক জীবন ও রাজনৈতিক কর্মজীবন:
খন্দকার মোশতাক আহমেদ ১৯১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরা জেলার (বর্তমান কুমিল্লা) দাউদকান্দির দশপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে বিএল ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৪২ সালে রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি বিদ্যুৎ, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং পরে বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে কার্যকাল ও বিতর্ক:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের “জাতির সূর্য সন্তান” বলে অভিহিত করেন, যা ব্যাপক নিন্দা অর্জন করে। তাঁর শাসনামলে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মোঃ মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা হন। তিনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ চালু করেন এবং বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ রাখেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দায়মুক্তি বিল (ইন্ডেমনিটি বিল) পাশ করেন। মাত্র ৮১ দিন ক্ষমতায় থাকার পর ৩ নভেম্বর ১৯৭৫-এ খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং ৬ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তী জীবন ও মৃত্যু:
কারাগার থেকে মুক্তির পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ ডেমোক্র্যাটিক লীগ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা করেন, তবে তেমন সফলতা পাননি। ১৯৯৬ সালের ৫ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
খন্দকার মোশতাক আহমেদের জীবনী সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে আমরা এই নিবন্ধটি আপডেট করব।