মুলাদী: বরিশালের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত বরিশাল জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল মুলাদী। প্রশাসনিকভাবে এটি মুলাদী উপজেলার সদর। বরিশাল জেলার চতুর্থ বৃহত্তম শহর এবং মুলাদী উপজেলার বৃহত্তম শহরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বরিশাল শহর থেকে মাত্র ৩১.৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই উপজেলাটির জনসংখ্যা প্রায় ২০,৪৯০। পুরুষ ও নারীর অনুপাত প্রায় সমান।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যাগত বিবরণ:
মুলাদীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ যথাক্রমে ২২°৫৩′১৫″ উত্তর ও ৯০°২৩′২০″ পূর্ব। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ১০ মিটার। উপজেলার আয়তন ২৬০.৮৫ বর্গকিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, মুলাদীর জনসংখ্যা ছিল ১৭৪৭৭৫ জন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই মুসলিম, ছোট অংশ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান। নয়া ভাঙ্গনী, আড়িয়াল খাঁ ও খালিয়ার নদী উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
মুলাদী থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৯ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ২৪শে মার্চ থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়। এক সময় এটি ঢাকা-জামালপুর রাজস্ব জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে মুলাদীর জনগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয় মুলাদী।
অর্থনৈতিক কার্যকলাপ:
মুলাদীর অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, ডাল, পান, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও এখানে উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন কুটির শিল্প যেমন স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প ইত্যাদি এখানে বিকাশ লাভ করেছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
শিক্ষার হার ৫৬% এর কাছাকাছি। মুলাদী সরকারি কলেজসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে।
উল্লেখযোগ্য স্থান ও প্রতিষ্ঠান:
গাছা মিয়াবাড়ীর মসজিদ, সৈয়দেরগাঁও গ্রামের প্রাচীন মসজিদ, গঙ্গাপুর গ্রামের সুলতান খার মসজিদ, মুলাদী সরকারি কলেজ, মুলাদী বন্দর হাট ইত্যাদি।
মুলাদী উপজেলা বরিশাল বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এর ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম।