মিজানুর রহমান চৌধুরী: বাংলাদেশের রাজনীতির এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব
মিজানুর রহমান চৌধুরী (১৯ অক্টোবর, ১৯২৮ - ২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৬) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রাজনৈতিক জীবন ছিল বহুমুখী এবং উল্লেখযোগ্য। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন।
চাঁদপুরের পুরানোবাজারের পূর্ব শ্রীরামদী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী মিজানুর রহমান চৌধুরীর পিতা ছিলেন মরহুম মোঃ হাফিজ চৌধুরী এবং মাতা ছিলেন মরহুমা মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগম। তিনি কলেজ জীবনে ছাত্র রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং ১৯৬২ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের কারাবন্দী থাকাকালীন তিনি আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি নিজেও গ্রেফতার হন। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পুনরায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের সংসদেও সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় তিনি সাহায্য ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ১৯৭৫ সালের পর বহুদলীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের দুটি পৃথক ধারা সৃষ্টি হয়, যেখানে মিজানুর রহমান চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আশির দশকে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন এবং এরশাদ সরকারের সময় ১৯৮৬ সালে দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর তিনি জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দলের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে তার মৃত্যু হয়। মিজানুর রহমান চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।