মাদারীপুর জেলার অন্যতম উপজেলা শিবচর, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির এক অপূর্ব সমন্বয়ে পরিপূর্ণ। ৩৩২.৯০ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২৩°১৫´ থেকে ২৩°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৫´ থেকে ৯০°১৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে পদ্মা নদী ও লৌহজং, শ্রীনগর ও সদরপুর উপজেলা, দক্ষিণে রাজৈর ও মাদারীপুর সদর উপজেলা, পূর্বে জাজিরা উপজেলা এবং পশ্চিমে ভাঙ্গা উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, শিবচরের জনসংখ্যা ৩১৮২২০; পুরুষ ১৫৬৫০৮ এবং মহিলা ১৬১৭১২। মুসলিম ৩০৬০৩৪, হিন্দু ১২১৬৫, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী অল্প সংখ্যক। পদ্মা, কুমার, ময়নাকাটা ও আড়িয়াল খাঁ নদী এবং বিভিন্ন বিল এ উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে।
শিবচরের ইতিহাস গভীর। ১৯৩০ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশের বিখ্যাত ইসলামি সংস্কারক হাজী শরীয়তুল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০) শ্যামাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এ অঞ্চলে ফরায়েজি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, যা পরবর্তীতে সমগ্র পূর্ববঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। তার পুত্র দুদু মিয়া (১৮১৯-১৮৬২) ফরায়েজি প্রভাবিত অঞ্চলে ‘পঞ্চায়েত প্রথা’ পুনঃপ্রবর্তন করেন এবং লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শিবচরের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিবচর থানা অপারেশন অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
শিক্ষার দিক থেকে শিবচরের অগ্রগতি লক্ষণীয়। ৪৩.৫% শিক্ষার হারের সাথে, এখানে ৪টি কলেজ, ৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৭৯টি মাদ্রাসা রয়েছে। বরহামগঞ্জ সরকারি কলেজ, রিজিয়া বেগম মহিলা কলেজ, দত্তপাড়া টি এন একাডেমি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অর্থনীতিতে কৃষি, ব্যবসা ও চাকুরীর উপর নির্ভরশীল এ উপজেলার প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, এবং বিভিন্ন ফলমূল।
শিবচরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাযার, লাইব্রেরি, ক্লাব ও কমিউনিটি সেন্টার এ উপজেলার সাংস্কৃতিক চিত্রের ধারক। রাজা বসুর দুর্গামন্দির, হাজী শরীয়তউল্লাহর মাযার, বন্দখোলা মঠ, পাঁচ চর মঠ, রাশু বাবুর বাড়ি ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থাপনা শিবচরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় পাকা, আধা-পাকা ও কাঁচা রাস্তার পাশাপাশি নৌপথও রয়েছে। শিবচরের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন এনজিও যেমন- আশা, ব্র্যাক, কেয়ার কাজ করে যাচ্ছে। শিবচরের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে একে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব।