মাকসুদ আলম

আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:২৭ এএম

ডঃ মাকসুদুল আলম: বাংলাদেশের সোনালী আঁশের অদম্য যোদ্ধা

ডঃ মাকসুদুল আলম (১৪ ডিসেম্বর ১৯৫৪ - ২০ ডিসেম্বর ২০১৪) একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী জিনতত্ত্ববিদ ছিলেন যিনি বিজ্ঞানের জগতে তার অসামান্য অবদানের জন্য সর্বজনস্বীকৃত। তার নাম সোনালী আঁশ পাটের সাথে চিরতরে জড়িত। কেবলমাত্র পাট নয়, পেঁপে ও রাবার গাছের জিনোম অনুক্রম উন্মোচনেও তার অবদান অসামান্য। তার জীবন ছিল এক অবিরাম সংগ্রামের, অনুসন্ধানের ও সাফল্যের গাথা।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা:

ফরিদপুরে জন্মগ্রহণকারী মাকসুদুল আলমের পিতা দলিলউদ্দিন আহমেদ ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের কর্মকর্তা এবং মা লিরিয়ান আহমেদ ছিলেন সমাজকর্মী ও শিক্ষিকা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তার পিতা শহীদ হন। এই পরিবারের দায়িত্ব বহন করে তাঁর মা ৪ ছেলে এবং ৪ মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করে তোলেন। শৈশবেই মাকসুদুল আলমের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। তিনি তার ছোট ভাই মাহবুবুল আলম ও বন্ধু জোনায়েদ শফিকের সাথে মিলে 'অনুসন্ধানী বিজ্ঞান ক্লাব' গঠন করেন। এই ক্লাবের কার্যকলাপ ছিল গাছপালা পর্যবেক্ষণ, চারা রোপণ এবং পাতা সংগ্রহ করে তাদের বৈজ্ঞানিক নাম খুঁজে বের করা। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল ও ঢাকা কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি রাশিয়ার মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অণুপ্রাণবিজ্ঞানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর (১৯৭৯) ও পিএইচডি (১৯৮২) ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে জার্মানির ম্যাক্স প্লাংক জৈবরসায়ন ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৮৭ সালে প্রাণরসায়নে আরও একটি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

গবেষণা ও কর্মজীবন:

মস্কোতে অধ্যয়নকালে তিনি ভ্লাদিমির পেত্রোভিচ মুলাচেভের সাথে কাজ করার সুযোগ পান। জার্মানিতে তিনি ডিটার উস্টাহেল্ট ও গেরাল্ড হেইজেলবাওয়ার এর সাথে কাজ করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক জীবপণ্য প্রকৌশল কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ও তার সহকর্মীরা গবেষণার জন্য ১০ লাখ ডলার অনুদান পান। ১৯৯২ সালে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০০ সালে তিনি ও র‌্যান্ডি লারসেন সহ অন্যান্য গবেষকরা প্রাচীন জীবাণুতে মায়োগ্লোবিনের মতো এক নতুন ধরনের প্রোটিন আবিষ্কার করেন। ২০০১ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৩ সালে তিনি বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞান, প্রোটিনসমগ্র বিজ্ঞান ও জৈব তথ্যবিজ্ঞানে অগ্রসর গবেষণা কেন্দ্র (ASGPB) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি হাওয়াইয়ান পেঁপের জিনোম অনুক্রম বের করেন এবং মালয়েশিয়ায় রাবার গাছের জিনোম অনুক্রম উন্মোচনেও সফল হন।

পাটের জিনোম অনুক্রম:

ডঃ মাকসুদুল আলমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো ২০১০ সালে তোষা পাটের (Corchorus olitorius) জিন নকশা উন্মোচন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ডাটাসফটের গবেষকদের সাথে যৌথ প্রচেষ্টায় তিনি এই সাফল্য অর্জন করেন। ২০১০ সালের ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। এই আবিষ্কারের ফলে উন্নত জাতের পাট উদ্ভাবন, যেমন মিহি আঁশের পাট, শীতকালীন পাট, সহজ-পচনশীল পাট, পোকা-প্রতিরোধী পাট, ঔষধী পাট ইত্যাদি সম্ভব হয়েছে। তিনি ২০১২ সালে পাটের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাকমাক্রোফোমিনা ফেইজেওলিনার জিনোম অনুক্রম উদ্ঘাটনেও নেতৃত্ব দেন।

মৃত্যু ও স্বীকৃতি:

ডঃ মাকসুদুল আলম ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের কুইনস মেডিকেল সেন্টারে যকৃতের সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রদান করে।

ডঃ মাকসুদুল আলম: বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট জিনতত্ত্ববিদ যিনি পাট, পেঁপে ও রাবারের জিনোম অনুক্রম উন্মোচনে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • তোষা পাটের জিনোম অনুক্রম উন্মোচন
  • পেঁপে ও রাবার গাছের জিনোম অনুক্রম উন্মোচন
  • ২০১৬ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক
  • হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - মাকসুদ আলম

২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে ধর্মঘট স্থগিতের ব্যাপারে সম্মত হন।