বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান: একজন সাহসী বিচারকের জীবনী
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি এবং ২০১১ সালে দেশের প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য পরের সারিতে ছিলেন। তবে, রাজনৈতিক কারণে তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি এবং দুবার পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৬৫ এবং ১৯৬৬ সালে যথাক্রমে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর, মমিনুর রহমান ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি ঢাকা জেলা জজ আদালতে আইন পেশা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগের এবং ১৯৮০ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হন। ১৯৯৬ সালে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০০৯ সালে আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন।
বিচারপতি মমিনুর রহমানের বিচারকাজে সাহসিকতা এবং সততা প্রশংসনীয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তিনি বিচারপতি যুবায়ের রহমান চৌধুরীর সাথে মিলে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ জারি করেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পদের বিবরণী চাওয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেন। এছাড়াও, তিনি বিচারপতি শহীদুল ইসলামের সাথে মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্থগিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জবাব চেয়ে আদেশ জারি করেন এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আজম জে চৌধুরীর মামলার কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষণা করেন। তবে, এসব সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে তাকে ১৭ মার্চ ২০০৮ সালে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক বিচারিক ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়।
মমিনুর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিবিদ হান্নান শাহের ছোট ভাই। তার পদোন্নতির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাব এবং দুইবার পদোন্নতি থেকে বাদ পড়ার পর তিনি ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট থেকে পদত্যাগ করেন।
বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের জীবন এবং কাজ বাংলাদেশের বিচার বিভাগে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার সাহসিকতা, সততা এবং নীতিবোধ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।