ভারত ও বাংলাদেশ

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৭:৫৫ এএম

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ; ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভূগোলের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। একসময় একই ভূখণ্ডের অংশ এই দুটি দেশ ১৯৪৭ সালের ভারতীয় উপমহাদেশের বিভাজনের পরেও একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন আরো দৃঢ় করেছে। বাণিজ্য, সংযোগ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বারবার সহযোগিতা ও সঙ্ঘাতের মধ্যে দোদুল্যমান। নদীর অমীমাংসিত পানিবণ্টন চুক্তি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো মূল বিষয়গুলো বাংলাদেশে অসন্তোষ বাড়িয়ে তুলেছে। ভারতের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থার প্রতি স্পষ্ট সমর্থন সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে এবং সমালোচিত হয়েছে।

২০২৪ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, পরিস্থিতি সঙ্কটপূর্ণ মোড় নিয়েছে। ভারতের প্রতিক্রিয়া, যার মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত, বিভাজনকে আরো গভীর করেছে। জাতীয় প্রতীককে অসম্মান এবং ভারতীয় নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্যের মতো ঘটনাগুলো এই ফাটলকে আরো তীব্র করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে, বর্তমান উত্তেজনা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককেই হুমকির মুখে ফেলছে না; বরং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। একটি ভারসাম্যপূর্ণ, সম্মানজনক এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকার সমালোচনামূলক মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও টেকসই সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য একটি রোডম্যাপ প্রস্তাব করা হয়েছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশকে রাজনৈতিক, সামরিক এবং মানবিক সহায়তা দিয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর, সম্পর্কের প্রাথমিক বছরগুলো সদিচ্ছা এবং সহযোগিতার দ্বারা চিহ্নিত ছিল। তবে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো বারবার এই সম্পর্ককে পরীক্ষা করেছে।

ভৌগোলিক কৌশলগত আগ্রহ এবং ক্ষমতার অসমতা বাংলাদেশের প্রতি ভারতের কৌশলগত আগ্রহকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা এবং নির্দিষ্ট শাসনব্যবস্থার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অভিযোগ সমালোচনা টেনে এনেছে।

শেখ হাসিনার শাসনকালকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার সময়কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে, পানিবণ্টন চুক্তি, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সংযোগ প্রকল্প নিয়ে অসন্তোষ রয়ে গেছে।

বিশেষ করে শেখ হাসিনার শাসনামলে আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অতিরিক্ত প্রভাবের অভিযোগ তুলেছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে শেখ হাসিনার সরকারের পতন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত। আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন শাসনের সমাপ্তি, যা কর্তৃত্ববাদী শাসন, ব্যাপক দুর্নীতি এবং জনগণের ব্যাপক অসন্তোষের অভিযোগে জর্জরিত ছিল, দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের দরজা খুলে দেয় এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে সম্ভাব্য নতুন দিক নির্ধারণের সুযোগ সৃষ্টি করে। তবে, ভারতের জন্য এই রাজনৈতিক পরিবর্তন জটিল চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে, কারণ আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের গভীর সম্পর্ক এবং ঢাকায় প্রভাব বজায় রাখার স্বার্থ।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভাজন ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।
  • নদী পানি বণ্টন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
  • ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন দুই দেশের সম্পর্কের জন্য সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
  • সম্পর্কের টেকসই উন্নয়নের জন্য পারস্পরিক সম্মান ও আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।