বড়াইগ্রাম: নাটোর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাসে পরিপূর্ণ। ২৯৯.৬০ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২৪°১০´ থেকে ২৪°২১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০১´ থেকে ৮৯°১৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে গুরুদাসপুর ও নাটোর সদর, দক্ষিণে আটঘরিয়া ও ঈশ্বরদী, পূর্বে চাটমোহর এবং পশ্চিমে লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় বড়াইগ্রামের সীমানা বিস্তৃত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ২৭৯৬৭২, যার মধ্যে পুরুষ ১৩৮৭৪৬ এবং মহিলা ১৪০৯২৬। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বসবাস রয়েছে এখানে। বড়াল ও মরা বড়াল নদী, পাঙ্গিয়ার দিঘি এই উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
১৮৬৯ সালে বড়াইগ্রাম থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ঐতিহাসিক দিক থেকে বড়াইগ্রাম অত্যন্ত সমৃদ্ধ। নগর ইউনিয়নের তাম্রশাসন (৪১৫-৪৫৫ খ্রিস্টাব্দ), প্রাচীন পর্ণশর্বরী মূর্তি, জোয়ারী ইউনিয়নের মুঘল দুর্গ, কালী মন্দির, দুর্গা মন্দির, শিব মন্দির (১২১২ বঙ্গাব্দ), হারোয়ার প্রাচীন জয়কালী মন্দির, আহমদপুরের নবাবী আমলের মসজিদ, বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের প্রাচীন জমিদার বাড়ি ও শিবমন্দির, নোয়াবড়ি গ্রামের সোনা পীরের দরগাহ, চান্দাই ইউনিয়নের সাঁতৈল রাজপ্রাসাদ, মাঝগাঁও ইউনিয়নের প্রাচীন গুনাইহাটি মসজিদ ও ফারসি শিলালিপি ইত্যাদি বহু প্রত্নসম্পদ বড়াইগ্রামের ইতিহাসের সাক্ষী।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বনপাড়া মিশন শরণার্থী শিবিরে ৮৫ জন নিরীহ মানুষকে পাকবাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। মাঝপাড়া ও মশিন্দায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর তীব্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বড়াইগ্রামে একটি গণকবর ও একটি স্মৃতিস্তম্ভ এই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে রেখেছে।
বড়াইগ্রামের অর্থনীতিতে কৃষিকাজ প্রধান ভূমিকা পালন করে। ধান, আখ, গম, সরিষা, হলুদ ও বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, পেয়ারা প্রভৃতি ফল উৎপাদনেও বড়াইগ্রাম অগ্রণী। ছোটোখাটো শিল্প ও কলকারখানা, কুটির শিল্পের মাধ্যমেও এখানকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে। বড়াইগ্রামের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আটাই গ্রামের ১৫০ একর দিঘি, মুঘল দুর্গ (জোয়ারী), সাঁতৈল রাজপ্রাসাদ (চান্দাই), বনপাড়া মিশন এবং বোর্নি রোমান ক্যাথলিক মিশন। এই উপজেলায় বিভিন্ন সংখ্যক হাটবাজার, মেলা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।