ব্লকচেইন প্রযুক্তি: ব্লকের শৃঙ্খল, ডিজিটাল বিপ্লবের মেরুদণ্ড
ব্লকচেইন (Blockchain) কথাটি শুনলে অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, এটি কী? আসলে, ব্লকচেইন হলো এক ধরণের বিকেন্দ্রীকৃত, বিতরণকৃত ডিজিটাল লেজার যা ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে নিরাপদে সংযুক্ত থাকা রেকর্ডের একটি ক্রমাগত বর্ধমান তালিকা। প্রতিটি ব্লকে রয়েছে পূর্ববর্তী ব্লকের একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাশ, একটি টাইমস্ট্যাম্প এবং লেনদেনের তথ্য। একবার কোনো তথ্য ব্লকে রেকর্ড হয়ে গেলে, তা আর পরিবর্তন করা যায় না, এ জন্যই এটি নিরাপদ এবং বিশ্বাসযোগ্য।
ব্লকচেইনের উৎপত্তি:
ব্লকচেইনের ধারণার উৎপত্তি ১৯৯১ সালে স্টুয়ার্ট হ্যাবার ও ডব্লিউ. স্কট স্টর্নেটার কাজের সাথে যুক্ত। তারা ডিজিটাল ডকুমেন্টের টাইমস্ট্যাম্প নিরাপদ করার উপায় খুঁজেছিলেন। ১৯৯২ সালে, ডেভ বেয়ার, হ্যাবার এবং স্টর্নেট্টা মার্কেল ট্রি নকশাটি উন্নত করেছিলেন। ২০০৮ সালে, সাতোশি নাকামোতো নামে এক ব্যক্তি বা ব্যক্তিদল বিটকয়েনের জন্য প্রথম বিকেন্দ্রীকৃত ব্লকচেইন তৈরি করেছিলেন, যা দ্বৈত ব্যয়ের সমস্যা সমাধান করেছিলো।
ব্লকচেইনের কাজের ধরণ:
ব্লকচেইন একটি পিয়ার-টু-পিয়ার (P2P) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে নোডগুলি নতুন ব্লক যুক্ত করতে ও যাচাই করতে ঐক্যমত্য অ্যালগরিদম অনুসরণ করে। ব্লকচেইনের ডেটা নোডগুলির মধ্যে বিতরণ করা থাকে, তাই কোনও একক নোড ব্যর্থ হলেও পুরো সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এটি উচ্চ বাইজেনটাইন ফল্ট টোলারেন্স দ্বারা চিহ্নিত।
ব্লকচেইনের ব্যবহার:
ব্লকচেইনের ব্যবহার ক্রিপ্টোকারেন্সি ছাড়িয়েও বহু ক্ষেত্রে প্রসারিত হচ্ছে। যেমন:
- পরিচয় ব্যবস্থাপনা
- কার্যকরী প্রক্রিয়াকরণ
- ঐতিহাসিক স্থান নথিভুক্তকরণ
- খাদ্য নিরাপত্তা
- নির্বাচন
ব্লকচেইনের প্রকার:
ব্লকচেইন মূলত চার প্রকার: পাবলিক, প্রাইভেট, কনসোর্টিয়াম এবং হাইব্রিড। পাবলিক ব্লকচেইন সবার জন্য উন্মুক্ত, যখন প্রাইভেট ব্লকচেইন নির্দিষ্ট অনুমতিকৃত ব্যবহারকারীদের জন্য। কনসোর্টিয়াম ব্লকচেইন একাধিক সংগঠন দ্বারা পরিচালিত, এবং হাইব্রিড ব্লকচেইন পাবলিক ও প্রাইভেট উভয় বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
ব্লকচেইনের সুবিধা ও অসুবিধা:
ব্লকচেইনের সুবিধা হলো এর নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা, দক্ষতা, কেন্দ্রীকরণের অভাব এবং তৃতীয় পক্ষের উপর নির্ভরতার অভাব। অসুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ ব্যয়, ধীর গতি, স্কেলেবিলিটির সমস্যা এবং নিয়ন্ত্রণের অভাব।
ব্লকচেইনের ভবিষ্যৎ:
ব্লকচেইন প্রযুক্তি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং এর ব্যবহার অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রসারিত হবে। আইবিএম, মাইক্রোসফট, ও অন্যান্য বড় প্রযুক্তি সংস্থা ইতিমধ্যেই ব্লকচেইনে বিনিয়োগ করছে। বিশ্বের অনেক সরকার ব্লকচেইনের ব্যবহার বিভিন্ন সেক্টরে পরীক্ষা করছে। ভবিষ্যতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি বিশ্বের অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।