ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উপজেলা নাসিরনগর। ২৯৪.৩৬ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা ২৪°০৫´ থেকে ২৪°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০২´ থেকে ৯১°২০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে লাখাই ও অষ্টগ্রাম, দক্ষিণে সরাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, পূর্বে মাধবপুর এবং পশ্চিমে বাজিতপুর ও অষ্টগ্রাম উপজেলা নাসিরনগরের সীমান্তবর্তী। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, উপজেলার জনসংখ্যা ৩০৯০১১; পুরুষ ১৫০৫৭৭, মহিলা ১৫৮৪৩৪। মুসলিম ২৫৮৫৯৩, হিন্দু ৫০৩৫১, এবং অল্পসংখ্যক বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বাসিন্দা রয়েছে। মেঘনা, তিতাস, কুলকুলিয়া, বালভাদ্রা ও হারাল নদী এই উপজেলার জলাশয়।
১৮৬০ সালে নাসিরনগর মহকুমা গঠিত হয় এবং ১৮৭৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা নামকরণ করা হয়। ১৯১০ সালে থানা এবং ১৯৮৩ সালের ১ আগস্ট উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। নাসিরনগরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। জগন্নাথ মন্দির (১৯১৭), ফান্দাউকের মুঘল আমলের হিন্দু মন্দির, হরিপুর জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, এবং উমা ও মহেশ্বরের আলিঙ্গন মূর্তি (বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরে) এই অঞ্চলের ঐতিহ্যের সাক্ষী।
মুক্তিযুদ্ধে নাসিরনগর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর পাকবাহিনীর হামলায় কুণ্ডা, বোলাকোট, গোকর্ণ ও নাসিরনগর ইউনিয়নে বহু মানুষ নিহত হয়। তুল্লাপাড়া ও ফুলবাড়ীয়া গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের তীব্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উপজেলায় ২৯৮টি মসজিদ, ৩৯টি মন্দির এবং ৪টি মাযার রয়েছে। কাহেতুরা মসজিদ, নুরপুর বড়বাড়ি মসজিদ, ফান্দাউক মন্দির, জগন্নাথ মন্দির উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষার হার ৩৪.৯%; পুরুষ ৩৫.৯%, মহিলা ৩৪.০%। নাসিরনগর মহাবিদ্যালয় (১৯৮৭), গুনিয়ক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৭) প্রমুখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কৃষি এই উপজেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ধান, পাট, সরিষা, গম প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, জাম প্রধান ফল। নাসিরনগর বাজার, ফান্দাউক বাজার, বৈশাখী মেলা (কুলিকুন্ডা) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। পাকা, আধা-পাকা এবং কাঁচা রাস্তা নেটওয়ার্ক রয়েছে। নৌপথও যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ১৯৭১ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা এই অঞ্চলকে ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। ব্র্যাক, আশা, সেভ দ্য চিলড্রেন প্রভৃতি এনজিও উপজেলায় কাজ করে।