বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে জালিয়াতির ঘটনা নতুন নয়। সাম্প্রতিককালে ‘নগদ লিমিটেড’ নামক মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে যা দেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ ডিজিটাল জালিয়াতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রায় ২৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এই জালিয়াতিতে অনুমোদনহীন পরিবেশক ও এজেন্টদের ব্যবহারের মাধ্যমে ১৭১১ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে এবং ব্যাংকে জমা টাকার চেয়ে অতিরিক্ত ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি তৈরি করা হয়েছে। নগদ লিমিটেডের প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার এর তদন্তের পর ছয় কর্মকর্তাকে ডাক বিভাগের কাছে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে নগদের নির্বাহী পরিচালক সাফায়েত আলম, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল হক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মর্তুজা চৌধুরী, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা আবু রায়হান, আর্থিক প্রশাসন ও পরিচালনা বিভাগের প্রধান রাকিবুল ইসলাম এবং সলিউশন ডিজাইন বিভাগের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুস সাকিব আকিব উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তানভীর আহমেদসহ শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। নগদ লিমিটেড একসময় থার্ড ওয়েভ টেকনোলজি লিমিটেড নামে পরিচিত ছিল এবং আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে এর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এই অনিয়ম ও জালিয়াতির জন্য ডাক বিভাগ দায়ী হওয়ার সম্ভাবনা উঠে এসেছে কারণ তারাই নগদকে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানের অনুমতি দিয়েছিল। ২০১৭ সালে ডাক অধিদপ্তর এবং থার্ড ওয়েভ টেকনোলজির মধ্যে হওয়া চুক্তি এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। এই জালিয়াতির পরিমাণ ও জড়িত ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর এই লেখাটি আরও বিস্তারিত করা হবে।
অন্যান্য ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায়ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত চালাচ্ছে। নাবিল গ্রুপের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সাত হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৬ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। আরও একটি ঘটনায় ইসলামী ব্যাংকের ৩৩০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৭ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ২৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই সব ঘটনায় ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং জালিয়াতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিরীক্ষা অব্যাহত আছে। এছাড়াও, বেসিক ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৪৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।