বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়: রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের আশ্রম
বিশ্বভারতী, ভারতের একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর শহরে অবস্থিত শান্তিনিকেতনে অবস্থিত। ১৯২১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দূরদর্শী স্বপ্নের ফসল এই বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯০১ সালে "ব্রহ্মচর্যাশ্রম" নামে একটি ছোট বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে যা পরবর্তীতে বিশ্বভারতীতে রূপান্তরিত হয়। ১৯৫১ সালে এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।
বিশ্বভারতীর ইতিহাস ও উদ্দেশ্য:
শুরুতে একটি আশ্রম হিসেবে শান্তিনিকেতন গড়ে তোলেন রবীন্দ্রনাথ। তার উদ্দেশ্য ছিল ব্যবহারিক জ্ঞান ও মূল্যবোধের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের সম্পূর্ণ মনোবিকাশ ঘটানো। প্রাচীন ভারতের তপোবন বিদ্যালয়ের আদর্শ অনুসরণ করে তিনি বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন। কবির পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন।
শিক্ষা ও গবেষণা:
বিশ্বভারতীতে বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে বিজ্ঞান বিষয়, শিক্ষা-ভবনে মানবিক বিষয়, বিদ্যাভবনে ভাষা ও সাহিত্য, কলাভবনে চারুকলা, শিল্পভবনে কারুশিল্প ও সঙ্গীত ভবনে সঙ্গীত, নৃত্য ও অভিনয় শিক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়াও রয়েছে চীনা ভবন, হিন্দি ভবন, পল্লী শিক্ষা ভবন আদি। শিক্ষাদানের পাশাপাশি বিশ্বভারতী গবেষণাকেন্দ্র হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিখ্যাত প্রাক্তনী:
বিশ্বভারতীর অনেক প্রাক্তনী দেশ-বিদেশে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হয়েছেন। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে আছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অস্কারজয়ী চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়, জয়পুরের রানী গায়ত্রী দেবী এবং ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
স্থাপত্য ও পরিবেশ:
শান্তিনিকেতনের স্থাপত্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ অনন্য। প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা মিশে বিশ্বভারতীকে এক অপরূপ সৌন্দর্যের আধারে পরিণত করেছে।
উপসংহার:
বিশ্বভারতী শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা কেন্দ্র। প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে বিশ্বভারতী প্রকৃতির কোলে জ্ঞান চর্চার এক অনন্য পরিবেশ গড়ে তুলেছে।