বিশ্বনাথ উপজেলা: সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এলাকা। সিলেট জেলার অন্তর্গত এই উপজেলাটির অবস্থান সিলেট শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। ২১৪.৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার উত্তরে সিলেট সদর ও ছাতক উপজেলা, দক্ষিণে ওসমানীনগর, পূর্বে দক্ষিণ সুরমা এবং পশ্চিমে সুনামগঞ্জের ছাতক ও জগন্নাথপুর উপজেলা অবস্থিত।
ঐতিহাসিক পটভূমি: জমিদার বিশ্বনাথ চৌধুরীর নামানুসারে উপজেলার নামকরণ। প্রাথমিকভাবে বাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠা, পরবর্তীতে পুলিশ ফাঁড়ি, থানা এবং অবশেষে ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তর। ১৯২২ সালে বিশ্বনাথ থানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে ১৮৮৫ সালে লোকাল সেলফ গভর্নমেন্ট আইনে ইউনিয়ন বোর্ড গঠন, ১৯১৯ সালে বাতিল এবং ১৯২২ সালে পুনরায় গঠন। ১৯০৮ সালে রেজিষ্ট্রি অফিস প্রতিষ্ঠা।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা: সুরমা নদী ও বিভিন্ন বিল (কোনাউড়া, নলডুবি, চাউলবুনি) উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধন করে। জনসংখ্যা প্রায় ২,৩২,৫৭৩; পুরুষ ১,১৫,৭৬৩, মহিলা ১,১৬,৮১০। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বসবাস রয়েছে।
অর্থনীতি: কৃষি প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তি। ধান, গম, আলু, আখ, পেঁয়াজ, আদা, ছোলা, শাকসবজি প্রধান ফসল। আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, আনারস, সুপারি প্রধান ফল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। কুটিরশিল্পের মধ্যে স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, শীতল পাটি, সেলাইয়ের কাজ, বাঁশ ও বেতের কাজ উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: ৩টি কলেজ, ২৮টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি পৌরসভা এবং ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৮টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং ৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে।
মুক্তিযুদ্ধ: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর নৃশংসতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রামের স্মৃতি বিশ্বনাথের ইতিহাসের অংশ। বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ ও গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল।
দর্শনীয় স্থান: সিতুলী দেবীর মন্দির, হাসনরাজার বাড়ি, গৌড় গোবিন্দের সাতপাড়ি দিঘি, জাহাজের মঞ্জিল, দশঘরের শ্রী বৈষ্ণবরায়ের সিদ্ধ বকুলতলা, শাহ কালুর মাযার, হাসন রাজার বাড়ি প্রভৃতি।