বাহুবল: হবিগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, যা এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, ভৌগোলিক সৌন্দর্য এবং জীবিকার বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। ২৫০.৬৫ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলাটি ২৪°১৫´ থেকে ২৪°২৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৮´ থেকে ৯১°৩৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে নবীগঞ্জ, দক্ষিণে চুনারুঘাট, পূর্বে শ্রীমঙ্গল এবং পশ্চিমে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ১৯৭৯৯৭ জনসংখ্যার এই উপজেলায় মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। খাসিয়া, টিপরা, মণিপুরি প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীও এখানে বসবাস করে। কোরাংগী, খোয়াই ও বরাক নদী বাহুবলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে অবদান রাখে।
ঐতিহাসিকভাবে, বাহুবল আফগান দলপতি খাজা উসমানের সাথে জড়িত। তিনি পুটিজুরিতে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন, যা পরবর্তীতে মুগলদের কাছে পরাজিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে বাহুবলের মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর, রেমা চা-বাগান, কালেঙ্গা প্রভৃতি স্থানে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। উপজেলাটি ৬ ডিসেম্বর মুক্ত হয়।
অর্থনীতিতে, কৃষি বাহুবলের মূল অবদান। ধান, সরিষা, চা, গম, রাবার, পান, চীনাবাদাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ফসল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও আছে। কুটিরশিল্পের মধ্যে স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প এবং মৃৎশিল্প উল্লেখযোগ্য। পুটিজুরি বাজার, বাহুবল বাজার, মিরপুর বাজার প্রধান বাজার।
শিক্ষা ব্যবস্থার দিক থেকে, উপজেলায় কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ইত্যাদি কাজ করে। ব্র্যাক, আশা, কেয়ার প্রভৃতি এনজিও এখানে কাজ করে। বাহুবলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য একে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা করে তুলেছে।