বাশার আল-আসাদ: সিরিয়ার দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রপতি ও বিতর্কিত নেতা
বাশার আল-আসাদ (জন্ম: ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫) সিরিয়ার একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, যিনি ১৭ জুলাই ২০০০ থেকে ২০১১ সালের আরব বসন্তের উত্তাল সময়কাল পর্যন্ত সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি প্রয়াত সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি হাফেজ আল-আসাদের পুত্র এবং বাথ পার্টির সদস্য। তার নেতৃত্বের অধীনে সিরিয়া গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয়, যার ফলে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বেড়ে যায়।
আল-আসাদের শাসনকাল:
২০০০ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর আল-আসাদ কিছু সংস্কারের কথা বলেছিলেন, যেমন গণতন্ত্রের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু, তার শাসনকাল বেশিরভাগ সময়ই রক্ষণশীল নীতি এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়নের দ্বারা চিহ্নিত। ২০০১ সালে গণভোটের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। তার শাসনামলে সরকারি খাতের আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং অর্থনীতির বেশিরভাগ অংশ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণে ছিল।
আরব বসন্ত এবং সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ:
২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় সিরিয়ার জনগণ গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে। আল-আসাদ সরকার এই আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করে, যার ফলে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। গৃহযুদ্ধে বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠী, সরকার ও আন্তর্জাতিক শক্তিদের জড়িত থাকার ফলে দেশটিতে মানবিক সংকট তৈরি হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:
আল-আসাদ সরকারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সম্পর্ক তীব্র অবনতির মুখে পড়ে, বিশেষ করে রাফিক হারিরির হত্যাকান্ডের ঘটনা এবং লেবাননে সিরিয়ান সৈন্যের উপস্থিতি নিয়ে বিতর্কের কারণে। অন্যদিকে, রাশিয়ার সাথে সিরিয়ার সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল এবং রাশিয়া সিরিয়ান সরকারের প্রতি সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে।
পরিবার ও পটভূমি:
আল-আসাদ আলাওয়াইট সম্প্রদায়ের অন্তর্গত, যারা সিরিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। আল-আসাদ পরিবার সিরিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে আসছে।
বিভিন্ন দিক:
আল-আসাদের নেতৃত্বকে বিতর্কিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার সমর্থকরা তার দৃঢ় নেতৃত্ব এবং সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টাকে প্রশংসা করে। অন্যদিকে, বিরোধীরা তার রক্তপাতপূর্ণ শাসন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য তীব্র সমালোচনা করে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের প্রভাব দেশটির অর্থনীতি এবং জনগোষ্ঠীর উপর বিরাট।