বাবা: ভালোবাসা, দায়িত্ব ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
পিতা, বাবা, জনক, আব্বা - এসব শব্দ শুধুমাত্র একজন পুরুষ অভিভাবককেই বোঝায় না, বরং এটি এক অসীম ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও দায়িত্বের প্রতীক। একটি সন্তানের জীবনে বাবার ভূমিকা অপরিসীম। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে পিতৃ দিবস পালিত হলেও, বাবার ভালোবাসা ও অবদানের মূল্যায়ন নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের অংশ।
১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই, আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় পিতৃ দিবস পালনের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ১৯১০ সালে সোনোরা স্মার্ট ডড নামক একজন মহিলা পিতৃ দিবস পালনের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রথম দিকে পিতৃ দিবসের জনপ্রিয়তা কম থাকলেও, ধীরে ধীরে ১৯৬৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন এটিকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পিতৃ দিবস হিসেবে পালিত হয়।
বাবার ভালোবাসা কতটা স্বার্থহীন ও আত্মত্যাগমূলক, তার এক অনন্য উদাহরণ হলেন মুঘল সম্রাট বাবর। তিনি সন্তান হুমায়ুনের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন। এই অসীম ভালোবাসাই পিতৃ দিবসকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। এই দিবসে সন্তানেরা তাদের বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সুযোগ পায় এবং বাবারা তাদের অবদানের মূল্যায়নের আনন্দ পান।
ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব:
বাবা সালেহ: সুলতানি আমলে বাংলায় একজন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী। তিনি বন্দর শাহী মসজিদ (১৪৮১ খ্রি.)সহ তিনটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তার কর্মকাল ছিল ১৪৮১-১৫০৬ খ্রিষ্টাব্দ, সোনারগাঁও অঞ্চলে। বর্তমান সালেহনগর এলাকার নামকরণ হয়েছে তার নামানুসারে। তাকে ১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে সোনারগাঁয়ে সমাহিত করা হয়।
বাবা আদম শহীদ: একজন সুফি সাধক। মুন্সিগঞ্জ জেলার রামপালের কাছে সমাহিত। তাঁর সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য সীমিত, তবে লোককথা অনুসারে তিনি বল্লাল সেনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন। বাবা আদম মসজিদ (১৪৮৩ খ্রি.) তার নামানুসারে নির্মিত।
উপসংহার:
পিতৃ দিবস শুধুমাত্র একটি দিবস নয়, এটি বাবার ভালোবাসা, আত্মত্যাগ এবং দায়িত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উৎসব। এ দিবসটি পারিবারিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে এবং সমাজে পিতার গুরুত্বকে উজ্জ্বল করে তোলে।