বান্দরবানের আলীকদম: পাহাড়ের কোলে মায়াবী সৌন্দর্যের আধার
বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা হলো আলীকদম। ৮৮৫.৭৮ বর্গ কিলোমিটার (২,১৮,৮৮০ একর) আয়তনের এই উপজেলা বান্দরবান জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা। ২১°২১´ থেকে ২১°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°১৫´ থেকে ৯২°৩৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে এর অবস্থান। বান্দরবান জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১১১ কিলোমিটার। উত্তরে লামা উপজেলা, দক্ষিণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য, পূর্বে থানচি উপজেলা, এবং পশ্চিমে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আলীকদমকে ঘিরে রয়েছে।
নামকরণের ইতিহাস:
আলীকদম নামের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। কোনো কোনো মতে ‘আলোহক্যডং’ থেকে এর নামকরণ হয়েছে। ১৯৬৩ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মানচিত্রে ও বোমাং সার্কেল চীফের নথিতে ‘আলোহক্যডং’ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক আতিকুর রহমানের মতে আলী পাহাড়ের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে এর নামকরণ আলীকদম হয়েছে। এছাড়াও জনশ্রুতি আছে যে, ৩৬০ আউলিয়া উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। তাদের মধ্যে আলী নামে এক সাধকের পদধুলিতে ধন্য হয়ে এই এলাকার নামকরণ হয় আলীকদম।
প্রশাসনিক ইতিহাস ও জনসংখ্যা:
পূর্বে লামা উপজেলার একটি ইউনিয়ন হিসেবে আলীকদম পরিচিত ছিল। ১৯৭৬ সালে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কিছু এলাকা নিয়ে আলীকদম থানা প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় উন্নীত হয়। বর্তমানে এখানে ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আলীকদমের জনসংখ্যা ছিল ৪৯,৩১৭ জন। আর ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৩,৭৯৯ জন হয়েছে। জনসংখ্যার ৫০% এর বেশি মুসলিম, বাকিরা বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। মারমা, ত্রিপুরা, মুরং, চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা উপজাতির মানুষের বসবাস এখানে।
অর্থনীতি ও শিক্ষা:
আলীকদমের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। পাহাড়ি এলাকায় জুম চাষ প্রধান পেশা। বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী কাঠ ও বাঁশের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। শিক্ষার দিক থেকে আলীকদম তেমন উন্নত নয়। ২০১১ সালের পরিসংখ্যানে সাক্ষরতার হার ছিল ৩১.৩%। এখানে কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি দাখিল মাদ্রাসা, এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
যোগাযোগ ও পর্যটন:
আলীকদমে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হলো চেয়ারকোচ ও জীপগাড়ি। বান্দরবান-থানচি-আলীকদম, বান্দরবান-লামা-আলীকদম এবং চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়কগুলি এখানকার প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা।
আলীকদমের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে আলীর সুড়ঙ্গ, মারাইংতং পাহাড়, ডিম পাহাড়, বিভিন্ন ঝর্ণা, নদী ও খাল। এসব স্থান পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়।
উপসংহার:
আলীকদম এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য একে অনন্য করে তুলেছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে পর্যটন শিল্পের বিকাশে আলীকদম একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
Key Information List: উপজেলার আয়তন ৮৮৫.৭৮ বর্গ কিলোমিটার। আলীকদম বান্দরবান জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা। ১৯৭৬ সালে থানা এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তর। ২০২২ সালে জনসংখ্যা ৬৩,৭৯৯। শিক্ষার হার ৩১.৩%। আলীর সুড়ঙ্গ, ডিম পাহাড়, বিভিন্ন ঝর্ণা দর্শনীয় স্থান।
metadescription: বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার একটি উপজেলা আলীকদম। পাহাড়ি অঞ্চলের এই উপজেলা আলীর সুড়ঙ্গ, ডিম পাহাড়, বিভিন্ন ঝর্ণা, নদী ও খালের জন্য পরিচিত।