বাদশাহ, পাদশাহ, পাদিশাহ – এই শব্দগুলি ফারসি উৎপত্তির একটি সম্মানসূচক খেতাব, যার অর্থ ‘রাজাদের রাজা’ বা ‘সর্বোচ্চ শাসক’। ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের শাসকগণ এই উপাধি ব্যবহার করেছেন। মুঘল সাম্রাজ্যের শাসকগণের ক্ষেত্রে এই উপাধির ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মুঘল বাদশাহগণ:
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাহিরউদ্দিন বাবর (১৪৮৩-১৫৩০) প্রথম পানিপথের যুদ্ধে (১৫২৬) জয়লাভ করে উত্তর ভারতে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং ‘বাদশাহ’ উপাধি ধারণ করেন। তার উত্তরাধিকারীরা – হুমায়ুন (১৫০৮-১৫৫৬), আকবর (১৫৪২-১৬০৫), জাহাঙ্গির (১৫৬৯-১৬২৭), শাহজাহান (১৫৯২-১৬৬৬), ও ঔরঙ্গজেব (১৬১৮-১৭০৭) – ‘বাদশাহ’ উপাধি ব্যবহার করেছেন এবং তাদের শাসনকালে সাম্রাজ্যের বিশালতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আকবর ও তার সংস্কার:
আকবর তার রাজত্বকালে (১৫৫৬-১৬০৫) বিভিন্ন সংস্কার করেছিলেন। মনসবদারী ব্যবস্থা, জাবতি ব্যবস্থা (জমি জরিপ ও রাজস্ব নির্ধারণের পদ্ধতি), দহশালার প্রথা (দশ বছরের গড় উৎপাদনের ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ধারণ) উল্লেখযোগ্য। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহনশীলতার নীতি ‘সুলহ-ই-কুল’ প্রচার করেছিলেন এবং ‘দীন-ই-ইলাহি’ নামে একটি নতুন ধর্মীয় আন্দোলনেরও সূচনা করেন।
ঔরঙ্গজেব ও সাম্রাজ্যের পতন:
ঔরঙ্গজেবের শাসনকাল (১৬৫৮-১৭০৭) মুঘল সাম্রাজ্যের শীর্ষকাল বলে বিবেচিত হলেও, তার রক্ষণশীল ও কঠোর নীতি এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফলে পরবর্তীতে সাম্রাজ্যের ক্ষয়িষ্ণুতা শুরু হয়। তার মৃত্যুর পর সাম্রাজ্য দ্রুত ভেঙে পড়ে।
অন্যান্য বাদশাহ:
শুধুমাত্র মুঘল সাম্রাজ্যই নয়, উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতানরাও ‘পাদিশাহ’ উপাধি ব্যবহার করতেন। এই উপাধি বিভিন্ন মুসলিম শাসকের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হত। বর্তমান সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ (১৯৬৪-১৯৭৫) এর নামও উল্লেখযোগ্য।
সুতরাং, 'বাদশাহ' শব্দটি একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ করে না; বরং ইতিহাসে বিভিন্ন শাসকদের সম্মানসূচক খেতাব এবং সর্বোচ্চ শাসকের প্রতীক।