বাঘারপাড়া: যশোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত বাঘারপাড়া উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিকভাবে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। ৩০৮.২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলাটি ২৩°০৮´ থেকে ২৩°২১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৩´ থেকে ৮৯°২৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ও মাগুরার শালিখা, দক্ষিণে নড়াইল সদর ও যশোর সদর, পূর্বে নড়াইল সদর ও শালিখা এবং পশ্চিমে যশোর সদর উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। চিত্রা ও ভৈরব নদী এবং আফরা ও দৈতলা খাল এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য জলাশয়।
জনসংখ্যা ও গ্রামীণ জীবন:
২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, বাঘারপাড়ার জনসংখ্যা প্রায় ২১৬,৮৯৭। পুরুষ ১০৭,৫৬৮ এবং মহিলা ১০৯,৩২৯। ধর্মীয়ভাবে মুসলিম ১৮১,৩১৯, হিন্দু ৩৫,৩২১, খ্রিস্টান ২৫ এবং অন্যান্য ২৩২। উপজেলাটি ১৯১ টি গ্রাম ও ১৫৬ টি মৌজায় বিভক্ত। গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর; ৭২.৪৭% জনগোষ্ঠী কৃষিকাজের সাথে জড়িত। ধান, গম, সরিষা, আলু, পাট, আখ, মরিচ ও বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। আম, জাম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, লিচু, পেয়ারা, তাল এবং নারিকেল প্রধান ফল-ফলাদি। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
বাঘারপাড়ার শিক্ষার হার ৫২.৮%; পুরুষ ৫৪.৭% এবং মহিলা ৫১%। এখানে ৯টি কলেজ, ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, ৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি কমিউনিটি স্কুল এবং ৩৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। শহীদ সিরাজ উদ্দীন হোসেন ডিগ্রি কলেজ, বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজ ও বাঘারপাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ উল্লেখযোগ্য। সংস্কৃতির দিক থেকে ৪৩টি ক্লাব, ২টি লাইব্রেরি, ১টি যাত্রাদল, ১টি সিনেমা হল, ৩টি নাট্যদল এবং ৩টি মহিলা সংগঠন রয়েছে।
ঐতিহাসিক তথ্য:
১৯৮৩ সালে বাঘারপাড়া থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দোহাকুলা ও সেকান্দারপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো। এই উপজেলার প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদের মধ্যে জমিদার বাড়ি (তেলকুপ), নীলকুঠির অবশেষ (জহুরপুর ও পদ্মাবিলা গ্রাম), বড় খুদরা মসজিদ ও কালীমন্দির, নারিকেলবাড়ীয়া কালীমন্দির, দীঘির পাড় মসজিদ (নিত্যানন্দপুর) এবং কাটুরাকান্দি ও প্রেমচারা গ্রামে ২০০ বছরের পুরাতন মসজিদ উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতি:
বাঘারপাড়ার অর্থনীতি কৃষি, ব্যবসা, পরিবহন ও যোগাযোগের উপর নির্ভরশীল। ১১.০৯% জনগোষ্ঠী ব্যবসা, ২.৪৪% পরিবহন ও যোগাযোগ এবং ৫.৩৫% চাকরি কাজে নিযুক্ত। কলা, পেঁপে, কাঁঠাল এবং পাট এই অঞ্চলের প্রধান রপ্তানিদ্রব্য। উপজেলার সকল ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন।
যোগাযোগ:
বাঘারপাড়া উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। ১৩৫ কিমি পাকা রাস্তা, ৭০ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ৪৮২ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। নৌপথ ১২ কিমি।
উপজেলার ভবিষ্যৎ:
বাঘারপাড়া উপজেলা আরও উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক বিকাশে কাজ করছে। আশা করা যায় এই উপজেলা দ্রুত প্রগতির পথে অগ্রসর হবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।