খুলনা বিভাগের অন্তর্গত বাগেরহাট, বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ জেলা। এটি ৩৯৫৯.১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এর জনসংখ্যা প্রায় ১৪৭৬০৯০ জন। বাগেরহাট বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত, মধুমতি, পসুর, বলেশ্বরী, কালীগঙ্গা, হরিণঘাটা, বাঙরা, ভোলা নদীসহ অনেক জলাশয় দ্বারা বেষ্টিত। ১৯৮৪ সালে বাগেরহাট পৃথক জেলা হিসেবে গঠিত হয়।
বাগেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য বিখ্যাত। পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে খান জাহান আলী খলিফাতাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন, যার কেন্দ্র ছিল বাগেরহাট। তিনি এখানে টাকশাল, মসজিদ, পুকুর ও দীঘি নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলির মধ্যে খান জাহান আলীর সমাধিসৌধ, ষাট গম্বুজ মসজিদ, নয়গম্বুজ মসজিদ, অযোধ্যার মঠ, বনগ্রামের রাজবাড়ি উল্লেখযোগ্য।
জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, গম, পাট, আখ, আলু, পান, ডাল, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। চিংড়ি চাষও জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মংলা বন্দর বাগেরহাট জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। শিল্প কারখানার মধ্যে রাইসমিল, ফ্লাওয়ারমিল, অয়েল মিল, ফিসফিডমিল, আইস ফ্যাক্টরি, চানাচুর ফ্যাক্টরি, বিড়ি ফ্যাক্টরি উল্লেখযোগ্য। কুটিরশিল্পের মধ্যে স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, মধুচাষ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষার দিক থেকে বাগেরহাটে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবং মাদ্রাসা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাট জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং এখানে অনেক গণহত্যা ও গণকবর রয়েছে। সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের সীমান্তে অবস্থিত হওয়ার কারণে এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্যও অতুলনীয়। পর্যটন ক্ষেত্রেও বাগেরহাট ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।