বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: স্বাধীনতার অগ্রদূত ও জাতির রক্ষাকারী

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা এবং এর সর্ববৃহৎ অংশ। দেশের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও জনগণের সুরক্ষা রক্ষাই এর প্রধান দায়িত্ব। এই ঐতিহ্যবাহী বাহিনীটির ইতিহাস রাজা-মহারাজাদের আমল থেকেই শুরু। পদাতিক, অশ্বারোহী ও হাতি বাহিনী নিয়ে গঠিত প্রাচীন সেনাবাহিনী থেকে ব্রিটিশ আমলে আর্মি অফ বেঙ্গল এবং পরবর্তীতে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে বাংলার সৈন্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পলাশীর প্রান্তর ও বক্সারের যুদ্ধের মতো ঐতিহাসিক ঘটনা এই সময়কালেরই অংশ।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সৃষ্টির পর ক্যাপ্টেন আব্দুল গনি’র নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার যুবকদের নিয়ে গঠিত হয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮, ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করে এবং মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধে মেজর জিয়াউর রহমান, কর্নেল এম.এ. গনি ওসমানী, লে: কর্নেল আব্দুর রব, গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকার সহ অনেক বাঙালি সৈনিক অসাধারণ সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর সেনাবাহিনী পুনর্গঠিত হয় এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক কোর যেমন ইঞ্জিনিয়ার্স, সিগন্যাল, সার্ভিস, অর্ডন্যান্স, মেডিকেল কোর গঠিত হয়। ১৯৭৪ সালে কুমিল্লায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমী প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়। এর পরবর্তী সময়েও সামরিক অভ্যুত্থান, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সংঘাতে সেনাবাহিনী বিভিন্ন ভূমিকায় অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ নামক দীর্ঘমেয়াদি আধুনিকায়ন পরিকল্পনার অধীনে আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন অস্ত্রশস্ত্র, যানবাহন ও প্রযুক্তির অর্জন, নারী সৈনিকদের সংযোজন এবং পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিই এ পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য। আধুনিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর স্থল শাখা এবং এর সর্ববৃহৎ অংশ।
  • এর প্রধান দায়িত্ব দেশের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও জনগণের সুরক্ষা রক্ষা করা।
  • ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যাত্রা শুরু।
  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
  • জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উল্লেখযোগ্য অবদান।
  • বর্তমানে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ পরিকল্পনার অধীনে আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ চলছে।

গণমাধ্যমে - বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

২১ ডিসেম্বর ২০২৪

৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।