বন উজাড়: একটি জটিল পরিবেশগত সমস্যা
বন উজাড়, বনভূমি উজাড় বা বন নিধন বলতে বন বা অরণ্য পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালাকে কেটে ফেলা বা পুড়িয়ে ফেলাকে বোঝায়। বিভিন্ন কারণে বন উজাড় করা হয়: কাঠ, কাঠকয়লা উৎপাদন, চাষাবাদ, পশুচারণ, এবং মানুষের বসতি স্থাপন। যথেষ্ট বৃক্ষরোপণ বা বনায়ন না করে বন উজাড়ের ফলে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি, জীববৈচিত্র্যের হ্রাস, মাটির ক্ষয় এবং মরুকরণ ঘটে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিবেশগত জৈব পৃথকীকরণের উপর এর মন্দ প্রভাব পড়েছে।
বন উজাড়ের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- কৃষি: কৃষিজমি বৃদ্ধির জন্য বনভূমি উজাড় করা হয়, যা বন উজাড়ের প্রধান কারণ।
- পশুপালন: গবাদি পশু লালন-পালনের জন্য বিস্তৃত চারণভূমি প্রয়োজন, যার জন্য বন উজাড় করা হয়।
- কাঠ কাটা: বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কাঠ কাটায় বন উজাড়ের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- নগরায়ন: শহরের বিস্তার ও নতুন বসতি স্থাপনের জন্য বন উজাড় করা হয়।
- সরকারী দুর্নীতি: দুর্নীতির কারণে বন সংরক্ষণের কার্যক্রম ব্যর্থ হয়।
- সম্পদের অসম বণ্টন: সম্পদের অসম বণ্টন দরিদ্র মানুষকে বন উজাড়ের দিকে ঠেলে দেয়।
- জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন দাবানল এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন ধ্বংস করে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর মতে, বন উজাড় জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত অচলাবস্থার মিলিত ফল। নর্মান মেয়ারস-এর গবেষণা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী বন উজাড়ের ৫% গবাদি পশুপালন, ১৯% ভারী কাঠ কাটা, ২২% পামগাছ চাষ এবং ৫৪% ‘কাটো ও পোড়াও’ পদ্ধতির কৃষিকাজের কারণে হয়।
বন উজাড়ের পরিণতি ব্যাপক। এটি জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, জলবায়ু পরিবর্তন, মাটির ক্ষয়, এবং মরুকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সমস্যার জন্ম দেয়। অনেকেই বন উজাড়কে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রধান কারণ মনে করে।
বন উজাড় রোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বন সংরক্ষণ, বনায়ন, টেকসই বন ব্যবস্থাপনা, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাজ করা অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং দৃঢ় নীতি বন উজাড় রোধের জন্য অপরিহার্য।