ফ্রান্স ও জার্মানি: ইউরোপের দুই শক্তিশালী দেশের জটিল সম্পর্ক
ফ্রান্স ও জার্মানি দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপের দুটি প্রধান নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা, একক মুদ্রা ইউরোর চালুসহ বহু উন্নয়নের পেছনে এই দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অবদান অপরিসীম। কিন্তু সম্প্রতি এই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। গত কয়েক বছরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও মতবিরোধ বেড়েছে, যা ইউরোপের ভবিষ্যৎকে নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোল্ৎজের নেতৃত্বাধীন দুই দেশের মধ্যে বৈরিতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রতিরক্ষা নীতি, জ্বালানী নীতি, পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষণীয়। উদাহরণস্বরূপ, পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির যৌথ প্রকল্পটি জার্মানির যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্তের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এছাড়াও, যৌথভাবে ট্যাংক উন্নয়নের প্রকল্পেও বিলম্ব ও অসম্মতি দেখা দিয়েছে।
জ্বালানি নীতিতেও উভয় দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ২০২২ সালে ফ্রান্সের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা দেখা দেওয়ার ফলে জার্মানিতে বিদ্যুতের ঘাটতি সৃষ্টি হয়, যা জার্মানির অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
ইউরোপের আকাশ সুরক্ষা (European Sky Shield) প্রকল্পে ফ্রান্সকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলির সাথে জার্মানি কাজ করছে, যা দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এই মতবিরোধগুলি শুধুমাত্র দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামগ্রিক শক্তি ও ঐক্যকেও প্রভাবিত করছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে ইউরোপকে একটি স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ঐক্য ও সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্রে এই মতবিরোধগুলি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।
ম্যাক্রোঁ ও শোল্ৎজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতিও উত্তেজনার আরও একটি কারণ। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও জাতীয়তাবাদী প্রবণতাও দুই দেশের মধ্যে বিভক্তি বাড়াতে ভূমিকা পালন করছে। অতএব, ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ইউরোপের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।