ফরাশগঞ্জ: ঐতিহ্য ও স্মৃতির ধারক পুরান ঢাকার এক অংশ
পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তরে অবস্থিত ফরাশগঞ্জ এলাকাটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। "ফরাসি" ও "গঞ্জ" শব্দদুটির সমন্বয়ে গঠিত ফরাশগঞ্জের প্রাচীন নাম ছিল "ফ্রেন্সগঞ্জ"। আঠারো শতকে এটি ফরাসি বণিকদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। ১৭৪০ সালে ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঢাকায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে এবং আহসান মঞ্জিলের কাছে তাদের কুঠি স্থাপন করে। ১৭৫০ সালে ইংরেজদের সঙ্গে কারখানা নিয়ে ছোটখাটো সংঘর্ষের পর নায়েব নাজিম জসরত খানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ১৭৮০ সালে এখানে একটি ফরাসি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে হলুদ, আদা, রসুন ও মরিচের পাইকারি ব্যবসা হতো।
ফরাসিরা এখানে রূপলাল হাউজের মতো অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর দালানকোঠা নির্মাণ করেছিল। এই ঐতিহাসিক ভবনগুলির অধিকাংশই বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। রূপলাল হাউজ ও বড়বাড়ির মতো স্থাপত্য নিদর্শনগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ফরাশগঞ্জের আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল লোহারপুল, যা তৎকালীন স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৮৩২ সালে ঢাকার কালেক্টর ওয়াল্টার ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ যাতায়াতের সুবিধার জন্য সূত্রাপুর খালের উপর একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করেন।
বি কে দাস রোড ও আহসানুল্লাহ রোড ফরাশগঞ্জের যাতায়াতের প্রধান সড়ক। এলাকাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও স্থাপত্যের সম্ভার এটিকে পুরান ঢাকার এক অনন্য স্থান করে তুলেছে। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে ঐতিহ্যের এই নিদর্শনগুলি সংরক্ষণের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।